ধৃতদের অপরাধ প্রমাণ হবেই! আশ্বস্ত করেছেন পুলিশ কমিশনার, সুকান্ত জানালেন লালবাজার থেকে বেরিয়ে
আনন্দবাজার | ০১ জুলাই ২০২৫
কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নিজেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার প্রেরিত দলটিকে নিয়ে সোমবার দেখা করলেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে। লালবাজারে প্রায় ৪৫ মিনিট কাটালেন তাঁরা। কলেজগুলিতে প্রাক্তনীদেরও অবাধ গতিবিধি কেন? পুলিশ কমিশনারকে সে প্রশ্ন করলেন দেশের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিজে। তবে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে অসন্তোষ প্রকাশ করেননি সুকান্তরা। কারণ ধৃতদের সাজা হবেই, সে বিষয়ে কমিশনার বর্মা আশ্বস্ত করেছেন সুকান্ত-সহ গোটা ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’কে।
মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিংহ, আর এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখী, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব এবং মননকুমার মিশ্রকে নিয়ে গঠিত চার সদস্যের ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’ সোমবার সকালেই কলকাতায় পৌঁছোয়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সেই দলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমেই যান কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে। বেলা ৩টের পরে কমিশনার বর্মার সঙ্গে সুকান্ত এবং নড্ডার পাঠানো দলের প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়। কসবার আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে একজন প্রাক্তন ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ওই কলেজে যাতায়াত করত কী ভাবে? শুধু কসবার ওই কলেজে নয়, কলকাতার অন্যান্য কলেজেও প্রাক্তনীদের ‘দাদাগিরি’ চলে কী ভাবে? বর্মাকে সে প্রশ্ন করেন সুকান্ত। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, কলকাতার কলেজগুলো আপনার তত্ত্বাবধানে থাকা এলাকার মধ্যে পড়ছে। এই কলেজগুলোয় বহিরাগতদের গতিবিধি রোখা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’’
‘তথ্যানুসন্ধানী দলে’র তরফে বর্মাকে প্রশ্ন করা হয় যে, গণধর্ষণে ধৃতদের মধ্যে একজন এর আগেও একাধিক বার একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও অবাধে অপরাধমূলক কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছিল কী ভাবে? এ ধরনের চিহ্নিত দুষ্কৃতীদের গতিবিধির উপরে পুলিশের যথেষ্ট নজরদারি কেন থাকে না? নির্যাতিতার এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও দলটির সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের কথা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
বেলা ৩টে ৫০ নাগাদ লালবাজার থেকে বেরিয়ে কসবার আইন কলেজের দিকে রওনা হয় বিজেপির প্রতিনিধিদলটি। কসবা যাওয়ার পথে ফোনে সুকান্ত আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, ধৃতদের সাজা হবেই। ঘটনাস্থল থেকে যে সব তথ্য-প্রমাণ পুলিশ সংগ্রহ করেছে এবং ইতিমধ্যেই যে মেডিকোলিগ্যাল অনুসন্ধান হয়েছে, তা গণধর্ষণে অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট বলে কমিশনার জানিয়েছেন।’’
পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিজেপি নেতারা কসবার আইন কলেজে যান। সেখানে প্রবেশের আগে অবশ্য প্রথমে তাঁদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়। কলেজের সামনে বিজেপির যুব সংগঠনের কর্মীদের জমায়েত ছিল। জমায়েত ছিল বেশ কয়েকটি বামপন্থী সংগঠনের কর্মীদেরও। কলেজের প্রবেশপথে পুলিশের বড়সড় বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছিল। গার্ডরেল দিয়ে প্রবেশপথ ঘিরেও রাখা হয়েছিল। সে সবের মাঝেই সেখানে পৌঁছোন সুকান্ত এবং ‘তথ্যানুসন্ধানী’ দলের সদস্যরা। মিনিট ১৫ তাঁদের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের বচসা চলে। তার পরে বিজেপি নেতৃত্ব-সহ নড্ডার প্রেরিত দলের সদস্যদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। তৎক্ষণাৎ বাইরে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বামপন্থী সংগঠনগুলির তরফে বিজেপি নেতৃত্বকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়ার বিরোধিতা করা শুরু হয়। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা পাল্টা বিরোধিতা শুরু করেন। দু’পক্ষে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তিও শুরু হয়ে যায়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইন কলেজে পরিদর্শন সেরে কসবা এলাকাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’। সেখানে দলের প্রধান সত্যপালের গলাতেও সুকান্তের সুরই শোনা যায়। তিনিও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টানেন এবং বলেন, ‘‘ধৃতদের কঠোরতম শাস্তি হবে বলে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’’ তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করেছেন নড্ডার পাঠানো দলের সব সদস্যই। সত্যপালের প্রশ্ন, ‘‘যার নামে এর আগে চার বার অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যে এর আগে চার বার গ্রেফতার হয়েছে, সে কী ভাবে ওই কলেজে চাকরি পেল?’’ স্থানীয় বিধায়ক এবং কলেজ পরিচালন সমিতির প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।