• ‘ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’ কার? টানাটানি দিঘা ও পুরীর
    এই সময় | ০১ জুলাই ২০২৫
  • শেষ পর্যন্ত কি রসগোল্লার দশাই হতে চলেছে ‘ধাম’ এবং ‘মহাপ্রসাদ’ বিতর্কের? পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ শ্রীক্ষেত্র, ধাম, মহাপ্রসাদ-সহ মন্দির সংক্রান্ত বেশ কিছু শব্দের পেটেন্ট চেয়ে আবেদন করেছেন।

    এমনকী, দিঘায় যদি ‘জগন্নাথধাম’ বা ‘মহাপ্রসাদ’ শব্দের ব্যবহার বন্ধ না হয়, তা হলে তাঁরা আদালতেরও দ্বারস্থ হবেন বলে জানানো হয়েছে। দিঘা জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষও চাইছেন, মামলা হলে শাস্ত্র থেকে উদাহরণ টেনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে। দিঘা মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসকন কর্তৃপক্ষের আশা, রায় তাঁদের পক্ষেই যাবে।

    তবে ইতিমধ্যেই পত্রযুদ্ধ শুরু হয়েছে দু’পক্ষের। একদিকে পুরীর রাজা গজপতি দিব্য সিংহ দেব এবং অন্যদিকে ইসকন কর্তৃপক্ষ। পুরীর রাজা চিঠি দিয়ে দাবি করেছিলেন, শ্রীক্ষেত্র ছাড়া আর কোথাও ‘জগন্নাথধাম’ থাকতে পারে না।

    পাল্টা চিঠিতে ‘ইসকন ইন্ডিয়া স্কলার বোর্ড’ পুরাণ-সহ বিভিন্ন শাস্ত্র ঘেঁটে দাবি করেছে, পুরীর বাইরেও ধাম রয়েছে, থাকতেই পারে। সেই চিঠি পুরীতে পাঠানো হলেও, এখনও জবাব আসেনি।

    দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পরেই প্রথমে পুরী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ, পরে ওডিশা সরকার আপত্তি জানায়। ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে ‘ধাম’ এবং ‘মহাপ্রসাদ’ শব্দের ব্যবহার বন্ধের অনুরোধ করেন।

    বলা বাহুল্য, সে সব বন্ধ হয়নি। দিঘা জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্টের সদস্য তথা ইসকন-কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস বলেন, ‘দিঘা জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগেও পুরীর রাজা গজপতি দিব্য সিংহ দেব আমাদের ভূবনেশ্বরে ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।

    তখনও তাঁরা ওই শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানান। আমাদের তরফে শাস্ত্র উল্লেখ করে জবাব দেওয়া হয়েছিল। পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য তাঁরা সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর কোনও জবাব আমরা পাইনি।’

    এর পরে ফের পুরীর রাজা চিঠি দেন। পাশাপাশি ওডিশা সরকার, মন্দির কর্তৃপক্ষও লাগাতার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। রথযাত্রার আগের দিন পুরী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাধী বলেন, ‘জগন্নাথ ধাম একটাই।

    পুরীর মন্দির বা মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্যও সবাই জানেন। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তবে এ বারে মন্দির সংক্রান্ত শব্দের পেটেন্ট চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি আমরা। আমরা ট্রেড মার্ক, ওয়ার্ড মার্ক — সব কিছুর পেটেন্টই চেয়েছি।’

    ‘ইসকন ইন্ডিয়া স্কলার্স বোর্ড’ পুরীর রাজাকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে পদ্মপুরাণের উত্তর–খণ্ড (অধ্যায় ২২৭) থেকে ‘মোক্ষম পরম পদম দদ্ব্যামামরুতম বিষ্ণুমন্দিরম/ অক্ষরম পরমধাম বৈকুণ্ঠম শাস্বতম পদম’ শ্লোকের উল্লেখ করা হয়েছে।

    অর্থাৎ মোক্ষ হলো পরম ধাম, অমৃত হলো বিষ্ণুর মন্দির/ অবিনাশী পরম ধাম, বৈকুণ্ঠ চিরন্তন ধাম। অর্থাৎ যেখানেই বিষ্ণুর মন্দির নির্মাণ হোক না কেন, তা ‘পরমধাম’ বা শ্রীবিষ্ণুর পরম আবাস বলে গণ্য হয়।

    যেহেতু জগন্নাথ হলেন বিষ্ণুর একটি রূপ, তাই শাস্ত্র অনুসারে যে কোনও বিষ্ণু মন্দিরকে ‘ধাম’ বলা যায়। এ ছাড়া ‘অগ্নিপুরাণ’ উদ্ধৃত করেও বলা হয়েছে, জ্ঞানী ভক্তদের দ্বারা নির্মিত বিষ্ণুর মন্দিরকে ‘হরের ধাম’ বলা যাবে।

    ‘স্কন্দ পুরাণ’-সহ অন্যান্য শ্লোকের উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। ভারতের বেশ কিছু মন্দিরকে ‘ধাম’ বলা হয়। যেমন, দিল্লির অক্ষরধাম, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধাম, বিহারের মুক্তেশ্বরনাথ ধাম।

    এ ছাড়া মহাপ্রভুর জন্মস্থান নবদ্বীপ ধাম-সহ একাধিক জায়গাকেও ‘ধাম’ নামে ডাকা হয়। পুরীর মন্দিরের তরফে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে শাস্ত্রের উল্লেখা থাকলেও ‘ধাম’ বা পুরীর বাইরে ধাম নিষিদ্ধ, এমন কিছুর উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছেন রাধারমণ দাস।

    মহাপ্রসাদ নিয়ে ইসকনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে বিষ্ণুর প্রসাদমন্ত্রেরও। তাতে বলা হয়েছে, ‘মহাপ্রসাদে গোবিন্দে, নম-ব্রহ্মণী বৈষ্ণবে, স্বল্প-পুণ্য-বতম রাজন, বিশ্বাসঃ নৈব জয়তে।’ অর্থাৎ, গোবিন্দ তথা বিষ্ণুর প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা যায়। রাধারমণ বলেন, ‘আমরা ওঁদের জবাবি চিঠির অপেক্ষায় রয়েছি।’

  • Link to this news (এই সময়)