অদম্য ইচ্ছের জোরে ক্যানসার জয়ের পর হিমালয় জয়!...
আজকাল | ০১ জুলাই ২০২৫
গোপাল সাহা
মাত্র ২০ বছর বয়সী উত্তর কলকাতার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক সাহসী মেয়ের কথা প্রেরণা জোগাবে সমস্ত যুবসমাজকে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে ২০২৩ এর শুরুতে এমন এক দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন যা তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিয়েছিল। হজকিন লিম্ফোমা (Hodgkin Lymphoma) নামক একটি বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই তরুণী। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে এই রোগ ধরা পড়ে। সেই সময়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে। পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত স্বপ্নগুলি যেন এক অজানা অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছিল।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজীব ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে তিনি কেমোথেরাপির একটি কঠিন ধাপ অতিক্রম করেন। অক্টোবরে শেষ হয় তাঁর চিকিৎসা। কিন্তু তাঁর যুদ্ধ কেবল শরীরের সঙ্গে নয়- এটি ছিল মন ও আত্মার এক চরম লড়াই, নিজের জীবনকে আবার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। তারপর যা ঘটল, তা যেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণার গল্প।
অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি পড়াশোনা এবং সঙ্গীতচর্চায় ফিরে আসেন। ক্যানসারকে নিজের ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রক হতে দেননি। বরং লক্ষ্য স্থির করেন আরও উঁচুতে- আক্ষরিক অর্থেই। তিনি হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে একটি কষ্টসাধ্য পর্বতারোহণ কোর্স সম্পূর্ণ করেন, যা শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার এক বড় পরীক্ষা।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পর্বতের শৃঙ্গে পৌঁছনোর যাত্রার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছিলেন, 'ভীষণ গর্বিত আর খুশি'। এখন ২৫ বছর বয়সে, তিনি শুধু ক্যানসার থেকে বেঁচে ফেরার প্রতীক নন বরং প্রতিটি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া মানুষের জন্য এক উদাহরণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যানসার বিজয়িনী বলেন, ''জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করো, যত বাধাই আসুক না কেন। তোমার স্বপ্নকে কখনও মরে যেতে দিও না। লড়াই করো এবং এমনভাবে ফিরে এসো, যেন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।''
চিকিৎসক রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, ''ওর গল্পটা প্রমাণ করে যে ক্যানসার থেকে বেঁচে থাকা মানেই শুধু টিকে থাকা নয়, বরং নতুন করে জ্বলে ওঠা, সাহস দেখানো, আর সেই স্বপ্নগুলোকে ধাওয়া করা যেগুলি কোনও অসুস্থতা নেভাতে পারে না।''