কসবাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করায় কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে শোকজ করেছিল তৃণমূল। সোমবার রাতে দলকে শোকজের জবাব পাঠিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, সংক্ষিপ্ত হলেও মদনের চিঠিতে রয়েছে দু’টি স্পষ্ট অংশ। একদিকে তিনি নিজের মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। অন্যদিকে, কেন তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন, তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চিঠিতে। মদন মিত্র এও জানিয়েছেন, এবার থেকে দলের অনুশাসন মেনেই চলবেন। তবে দল তাঁর জবাব কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।
তৃণমূল বিধায়ককে করা শোকজ নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। শুধু বলেছেন, ‘এ নিয়ে যা বলার দলকেই বলেছি। সংবাদমাধ্যমে নতুন করে এই নিয়ে কোনও কথা বলব না।’ কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে জোরদার। অভিযুক্তরা ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার হয়ে গিয়েছেন, বিচারপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে। এমন সময়ে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্যাতিতার চালচলন নিয়েই আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।
মদন মিত্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘কসবার এই ঘটনা ছাত্রছাত্রীদের একটা বার্তা দিল। যদি পরিচিত কেউ কলেজ বন্ধ থাকার দিন কোনও পদ দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠায়, তা হলে যাবেন না। তাতে আপনার-ই ভালো হবে। যদি ওই মেয়েটি না যেত, তা হলে এই ঘটনা ঘটত না। ওখানে যাওয়ার আগে যদি জানিয়ে যেত অথবা সঙ্গে দু’চারজন বন্ধুকে নিয়ে যেত, তা হলেও এই ঘটনা ঘটত না।’
দল যে এই মদনের এই মন্তব্য ভালো ভাবে নেয়নি, শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক্স পোস্টেই তা বোঝা গিয়েছিল। এই মন্তব্যকে বক্তার ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে লেখা হয়েছিল সেই পোস্টে। পরে আবার মদন ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, তিনি অপরাধীদের আড়াল করা বা অপরাধ লঘু করার পক্ষে নন। তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। মদন মিত্রর এহেন মন্তব্য দলের ভাবমূর্তিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে, সেই কথা জানিয়ে রবিবার তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী তাঁকে শোকজের চিঠি পাঠান। তিনদিনের মধ্যে তাঁর জবাব চাওয়া হয়।
রবিবার মদনকে পাঠানো শোকজের চিঠিতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল এই দুঃখজনক পাশবিক অত্যাচারের ঘটনায় পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বিশেষ ভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে।…প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। দুষ্কৃতীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় ও অসংবেদনশীল মন্তব্য আমাদের দলের ভাবমূর্তিকে যারপরনাই আঘাত করেছে। একইসঙ্গে আপনার মন্তব্য দলের কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধাচারণ করছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের এই আচরণের জন্য আপনাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’
সময়সীমার অনেক আগে, সোমবার রাতেই মদন মিত্র শোকজের জবাব দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সুব্রত বক্সীকে সংক্ষিপ্ত চিঠি লিখে নিজের কুমন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন মদন। তৃণমূল বিধায়ক জানিয়েছেন, তাঁর কথায় দলের ভাবমূর্তির কোনওরকম ক্ষতি হলে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত, নিঃশর্তে ক্ষমা চাইছেন। তবে কী কারণে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে খবর। সেইসঙ্গে কামারহাটির বিধায়ক এও জানিয়েছেন, এবার থেকে তিনি দলের অনুশাসন মেনে চলবেন।