নিখোঁজ ২, ICU-তে একজন ভর্তি, হায়দারাবাদের কারাখানায় বিস্ফোরণে আতঙ্কে ঘাটালের পরিবার
প্রতিদিন | ০২ জুলাই ২০২৫
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ছেলে নিখোঁজ। স্বামী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। আতঙ্কে দিন কাটছে চম্পা টুডু ও তার বউমা সবিতার। অন্যদিকে, স্বামীর খোঁজ না পেয়ে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন জয়শ্রীদেবীও। হায়দরাবাদে রাসায়নিক কারখানার দুর্ঘটনায় আতঙ্ক গ্রাস করেছে মেদিনীপুরের ঘাটালের হরিরাজপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। এই গ্রাম থেকে হায়দরাবাদের রাসায়নিক কারখানায় কাজে গিয়েছিলেন তিনটি পরিবারের চারজন। তাঁদের মধ্যে একজনের কিছু হয়নি। বাকিদের নিয়ে চিন্তায় গোটা গ্রাম।
দাসপুর এক নম্বর ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিরাজপুর গ্রামের তিনটি পরিবারের চারজন ওই রাসায়নিক কারখনায় শ্রমিক হিসাবে কাজে গিয়েছিলেন। চুল্লিতে বিস্ফোরণের পর অসীম টুডু ও শ্যামসুন্দর টুডু নিখোঁজ। চারজনের মধ্যে একজন রাজীব টুডু। তিনি অক্ষত রয়েছেন। রাতের ডিউটি সেরে সকাল আটটা নাগাদ ঘরে যাওরার পর তারপরই বিস্ফোরণের খবর পান তিনি। রাজীব টুডু ফোনে বলেন, “আমাদের গ্রামের আমরা চারজন এই কারখানায় কাজ করতাম। আমি রাতের ডিউটি সেরে সবে মাত্র ঘরে পৌঁছেছি তারপরই এই দুর্ঘনার খবর পাই। অসীম টুডু ও শ্যামসুন্দর টুডুর কোনও খোঁজ পাইনি। খুব চিন্তায় রয়েছি।” পাশাপাশি তারপদ টুডু নামে এক শ্রমিক মারাত্মক জখম হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি বলে জানা গিয়েছে।
রাজীবের কাছেই খবর পেয়ে আতঙ্কে অসীম টুডু ও শ্যামসুন্দর টুডুর পরিবার। শ্যামসুন্দর বাবা তারাপদ টুডুর হাত ধরে মাস খানেক আগে ওই কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সদ্য বিবাহিত শ্যামের স্ত্রী সবিতা টুডু স্বামীর নিখোঁজের ঘটনায় খুবই ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আমার সঙ্গে ওঁর কথা হয়েছিল। সকাল নটা নাগাদ রাজীব টুডু ফোন করে আমাদের দুর্ঘটনার খবর দেন। মাস খানেক আগে কাজে যোগ দিয়েছিল আমার স্বামী। কী হবে জানি না।” ছেলের নিখোঁজের ঘটনায় চরম উদ্বিগ্ন চম্পা টুডু। স্বামী আইসিইউতে ভর্তি। তিনি বলেন, “ছেলে সবে মাত্র কাজে যোগ দিয়েছিল। আমার স্বামী আইসিইউ তে ভর্তি। এর বেশি কিছু জানি না। বিডিও সাহেব এসছিলেন। ব্লক প্রশাসনের কাছে আমরা সাহায্য চেয়েছি।”
ঘুম উড়ে গিয়েছে অসীম টুডুর পরিবারেও। অসীম টুডুর স্ত্রী জয়শ্রী টুডু বলেন, “মাস ছয় আগে কাজ যোগ দেয় ও। দু’দিন আগে কথা হয়েছিল। কালী পুজোয় ছুটি নিয়ে আসার কথা ছিল ওঁর। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পাই। এখনও কোনও খবর পাইনি। শুনেছি হাসপাতালের তালিকায় ওঁর নাম নেই।” পরিবার দুটির আশঙ্কা কারখনার ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে রয়েছে তাঁরা। সবারই আশা অসীম আর শ্যাম দু জনেই ফিরে আসবে আগের মতোই। উৎকন্ঠায় দিন কাটছে পরিবার দু’টির। খবর পেয়ে হরিরাজপুর গ্রামের ওই দু’টি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন দাসপুর এক নম্বর ব্লকের বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ওই দুটি পরিবারের সঙ্গে দেখা করে খোঁজ খবর নিয়েছি। নিখোঁজ দু’জন হলেন অসীম টুডু ও শ্যামসুন্দর টুডু । জেলা শাসকের নির্দেশে ওই দুজনের আধার কার্ড-সহ সমস্ত তথ্য নিয়ে এসেছি। পাঠিয়েও দিয়েছি।”