কোর্টের নির্দেশে আপাতত পুলিশি হেফাজতেই গণধর্ষণে অভিযুক্ত তিন জন, শুক্রবার পর্যন্ত জেলে কলেজের সেই রক্ষীও
আনন্দবাজার | ০১ জুলাই ২০২৫
কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত, কলেজের প্রাক্তনী তথা অস্থায়ী কর্মী এবং দুই পড়ুয়াকে ৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। এই ঘটনায় কলেজের এক রক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁকে আগামী ৪ জুলাই, শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কড়া পদক্ষেপ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষও।
অভিযোগ, বুধবার রাতে প্রথমে কলেজের ইউনিয়ন রুমে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে। রক্ষীকে সেই সময়ে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন, যাঁকে ‘এম’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি কলেজের প্রাক্তনী। বাকি দু’জন (‘জে’ এবং ‘পি’ হিসাবে চিহ্নিত) এখনও কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। এই তিন জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কড়া পদক্ষেপ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে মূল অভিযুক্ত ‘এম’কে। শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাবদ যে পরিমাণ অর্থ মূল অভিযুক্ত নিয়েছেন, তা কলেজকে ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, বাকি দুই অভিযুক্ত ছাত্র যাতে অন্য কোনও কলেজে ভর্তি না-হতে পারেন, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ধর্ষণের ঘটনার তদন্তের জন্য সিট গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। তাতে ন’জন সদস্য রয়েছেন। এই আবহে কলকাতা পুলিশ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে জানিয়েছে, নির্যাতিতার পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে কে বা কারা এ রকম করছেন, তা নিয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ। এই কাজ করতে বারণও করেছে তারা। অন্য দিকে, কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে বিজেপিকে প্রতিবাদ মিছিল করার অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে কিছু শর্তও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই শর্ত মেনে বুধবার মিছিল করতে পারবে বিজেপি।
কসবার আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত-সহ ধৃত চার জনকে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। মূল অভিযুক্ত, কলেজের প্রাক্তনী তথা অস্থায়ী কর্মী ‘এম’, বাকি দুই পড়ুয়া ‘জে’ এবং ‘পি’-কে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শুক্রবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তার মেয়াদ শেষ হয়েছে সোমবার। ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা কলেজের রক্ষীকেও পরে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার তাঁকেও আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতের নির্দেশে, তিন অভিযুক্ত আগামী ৮ জুলাই, মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকবেন। অভিযুক্ত রক্ষী আগামী ৪ জুলাই, শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকবেন।
সমাজমাধ্যমে পুলিশের পোস্ট
নির্যাতিতার নাম-পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার সকালের ওই পোস্টে লালবাজারের তরফে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে চলে আসে, এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘কসবার ঘটনায় গোপন নথি ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা অন্য কোনও উপায়ে নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এটা আইনের লঙ্ঘন।’ তবে কে বা কারা, কী ভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন বা ঘটানোর চেষ্টা করছেন, তা প্রকাশ্যে আনেনি পুলিশ। লালবাজারের তরফে সকলকেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নির্যাতিতার আত্মসম্মান এবং গোপনীয়তাকে সম্মান জানানো আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যেই পড়ে।
চাকরি গেল
কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করল কলেজের পরিচালন সমিতি। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত দু’জন ছাত্রকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি, কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে ছেঁটে ফেলা হল মূল অভিযুক্ত ‘এম’কে। সঙ্গে অন্য দুই অভিযুক্ত ছাত্র যাতে অন্য কোনও কলেজে ভর্তি না-হতে পারেন, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর মঙ্গলবার প্রথম বার বৈঠকে বসে কলেজের পরিচালনা সমিতি। অভিযুক্ত ছাত্রদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালে কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন মূল অভিযুক্ত। দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছিল। কলেজ পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাবদ যে পরিমাণ অর্থ মূল অভিযুক্ত নিয়েছেন, তা কলেজকে ফিরিয়ে দিতে হবে। পুলিশের কাছে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে কী ভাবে অস্থায়ী কর্মী পদে নিয়োগ করেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরিবার চাইলে ওই ছাত্রীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
কোর্টের অনুমতি
কসবার আইন কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির যুব মোর্চার মিছিলে অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে অনুমতি দিলেও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে আদালত। কত লোক নিয়ে কখন মিছিল করা যাবে, তা বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট। বুধবার ওই মিছিল করার কথা বিজেপির। সেই মিছিলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর থাকার কথা। কিন্তু বিজেপির এই কর্মসূচিতে আপত্তি জানায় রাজ্য। তার পরেই মিছিলের অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। বুধবার ওই মিছিল করার কথা তাদের। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, তিন হাজার লোক নিয়ে ওই কর্মসূচি করতে হবে। তার বেশি জমায়েত করা যাবে না।
বিধিনিষেধ
কলেজ চত্বরে প্রাক্তনীদের অবাধ আনাগোনা রুখতে কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল পাঁচ মাস আগেই। কসবাকাণ্ডের পরে এ বার দক্ষিণ কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের ছাত্র সংসদ তাদের প্রতিষ্ঠানের যে কোনও অনুষ্ঠানে প্রাক্তনীদের আমন্ত্রণের বিষয়ে বিধিনিষেধ জারি করল। ছাত্র সংসদের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও প্রাক্তন ছাত্রকে কলেজ ছাড়ার (পাশ আউট) পাঁচ বছর পর্যন্ত কলেজের কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না বা যোগদানের অনুমতি দেওয়া হবে না! ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইন কলেজেরই প্রাক্তনী। ছাত্র সংসদের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গও।