জগাছায় ৩ জনের আত্মহত্যা, নজরে মৃত ছেলের অনলাইন ট্রেডিং ব্যবসা
বর্তমান | ০২ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা সামলাতে না পেরে মর্মান্তিক পরিণতির পথ বেছে নিয়েছিল কলকাতার ট্যাংরার দে পরিবার। সেই ঘটনার স্মৃতি এখনও মানুষের স্মৃতিপট থেকে মুছে যায়নি। তার মধ্যেই মঙ্গলবার সামনে এল জগাছার হাটপুকুরের আবাসনে বাবা-মা-ছেলে, একসঙ্গে তিনজনের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা। এক্ষেত্রেও প্রাথমিকভাবে পুলিস মনে করছে, বিপুল অঙ্কের ঋণের চাপ সামলাতে না পেরেই খাঁ পরিবার এমন মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এত টাকা দেনা হয়েছিল তাঁদের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিস। সেক্ষেত্রে ছেলে সম্বৃত খাঁর অনলাইন ট্রেডিংয়ের ব্যবসায় কোনও বড়সড় আর্থিক বিপর্যয় ঘটেছিল কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিস জেনেছে, আগে রামরাজাতলা এলাকাতেই ভাড়া থাকত এই পরিবার। বছর তিনেক আগে হাটপুকুরে আবাসনের তিনতলায় ফ্ল্যাট কেনেন তাঁরা। ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু গৃহকর্তা বলরাম খাঁ, তাঁর স্ত্রী শেলিদেবী—দু’জনেরই এখন তেমন কোনও রোজগার ছিল না। তাঁদের ছেলে সম্বৃত ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো হলেও স্থায়ী কোনও চাকরি পাননি। আগে একটি বেসরকারি সংস্থায় কিছুদিন কাজ করেছেন। তারপর থেকে যখন যেমন কাজ পেতেন, সেটাই করতেন অস্থায়ীভাবে। সম্প্রতি তিনি বাড়িতে বসেই অনলাইনে শেয়ার মার্কেটে লগ্নিও শুরু করেছিলেন। পুলিসের ধারণা, অনলাইন ট্রেডিংয়ের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে থাকতে পারেন তিনি। অথবা সেই কাজ করতে গিয়ে বড়সড় কোনও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার ফ্ল্যাটের বাইরে উপস্থিত সম্বৃতের বন্ধুরা জানান, তাঁদের সঙ্গেও ইদানীং খুর একটা যোগাযোগ রাখতেন না সম্বৃত। তাঁদের ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে লোকজন আসতেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা থেকে আত্মীয়-পরিজনরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালেও ব্যাঙ্কের লোন বিভাগের এক কর্মী ফ্ল্যাটে আসেন। বাইরে থেকে বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করে চলে যান তিনি। কী কারণে ব্যাঙ্ক থেকে লোক আসত, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কেউ। স্থানীয়রা আরও বলেন, মাঝেমধ্যেই অনলাইনে খাবার অর্ডার দেওয়া হতো সম্বৃতদের ফ্ল্যাট থেকে। তদন্তকারীদের ধারণা, সোমবার রাতেই সম্ভবত চরম সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মা ও ছেলে। তিনজন মিলে কীটনাশক জাতীয় কোনও বিষ পান করেন। রহস্য উন্মোচনে পুলিস তাঁদের কয়েকজন আত্মীয়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলেছে বলে খবর।
গত মার্চ মাসে কসবার হালতুতে বাড়ি থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের আড়াই বছরের পুত্রসন্তানের দেহ উদ্ধার হয়। আর্থিক অনটনের কারণেই গোটা পরিবার আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল বলে জানা যায়। একই ধরনের ঘটনা গত মে মাসে ঘটে হুগলির চন্দননগরে। ব্যবসার জন্য বাজার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বাবলু ঘোষ। দেনা শোধ করতে না পেরে প্রথমে স্ত্রী ও ১৩ বছরের মেয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে খুন করেন তিনি। পরে নিজে ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। তারপর জগাছার এই ঘটনা! -নিজস্ব চিত্র