অর্পিতা হাজরা
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আলিপুর আদালত পুলিশ কোর্ট চত্বরে টানটান উত্তেজনা। কলেজে গণধর্ষণ মামলায় ধৃত মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র নিজে একজন আইনজীবী, দুই শাগরেদও আইনের পড়ুয়া। তাদের বিরুদ্ধে এ রকম গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে আদালত চত্বরে অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘এলেই কাদা ছুড়ব’! কেউ বা বলছিলেন, ‘টোম্যাটো ছুড়ব’!
কেউ আবার জুতো ছোড়ার প্ল্যান করছিলেন। এই খবর ছিল পুলিশের কাছেও। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এ দিন মনোজিৎ, তার দুই সঙ্গী এবং কলেজের নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সশরীরে আদালতে হাজির করানো হয়নি। তাদের কসবা থানা থেকে বের করে নিরাপত্তার স্বার্থে আলিপুর থানায় এনে রাখা হয়।
ঘড়িতে তখন বেলা ১টা। আলিপুর আদালতের লকআপের সামনে তিল ধারণের জায়গা নেই। আইনজীবী–সাধারণ মানুষ–পুলিশে ছয়লাপ গোটা চত্বর। যদিও শেষমেশ আলিপুর আদালতের লকআপ পর্যন্তও তাদের আনা হয়নি। বিকেলের দিকে শুনানি শুরু করার চেষ্টা হলেও এজলাসে প্রবল হই–হট্টগোলের জেরে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম বিচারক শুভদীপ মিত্র চেয়ার ছেড়ে নেমে যান।
কিছুক্ষণ পরে বিকেল প্রায় সাড়ে ৫টা নাগাদ ফিরে আসেন বিচারক। শুরু হয় মামলার শুনানি। সরকারি কৌঁসুলি, অভিযুক্তদের আইনজীবী ও নির্যাতিতার আইনজীবীর সওয়াল–জবাব চলতে থাকে। ধৃত মনোজিৎ মিশ্রের ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীও এ দিন এসেছিলেন আদালতে। তিনি নিজেও আলিপুর আদালতের আইনজীবী বলেই দাবি সেখানকার আইনজীবী মহলের একাংশের।
তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের কাছে তিনি জানান, ‘মানসিক ভাবে আমি বিপর্যস্ত। মনোজিতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যতক্ষণ না প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ আমি ওর সঙ্গেই থাকব।’ তবে এ দিনও তাঁর অভিযোগ মনোজিৎকে ফাঁসানো হয়েছে।
আলিপুর আদালত চত্বরে মনোজিতের আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। এই ঘটনার পর তিনি যখনই এসেছেন, তখনই কান্নাকাটি করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।’ আদালতের বাইরে রাজুর আরও দাবি, ‘মনোজিৎকে ফাঁসানো হয়েছে। ষড়যন্ত্র হয়েছে ওর বিরুদ্ধে।’
মনোজিতের ঘাড়ে ‘লাভ বাইট’–এর চিহ্ন রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। রাজুর যুক্তি, ‘নির্যাতিতার মোবাইল ও কললিস্ট খতিয়ে দেখা হোক। ভিডিয়োতে বলপূর্বক নির্যাতনের কোনও প্রমাণ নেই।’ দু’পক্ষের সওয়াল–জবাব শেষে আদালত অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরে তাদের আলিপুর থানা থেকে ফের কসবা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।