• বিতর্কে মানসও, মুখ্যমন্ত্রীর ‘নীরবতা’য় প্রশ্ন শুভেন্দুর
    আনন্দবাজার | ০২ জুলাই ২০২৫
  • দক্ষিণ কলকাতায় আইন কলেজে গণধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে বিধায়ক মদন মিত্র, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে ঘরে-বাইরে ‘চাপে’র মুখে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের কাছে মঙ্গলবার ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছেন মদন। তবে এরই মধ্যে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার একটি মন্তব্যকে হাতিয়ার করে শাসক দলকে ফের নিশানা করেছে বিরোধীরা। যদিও মানসের দাবি, তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে কলেজ-কাণ্ডের কোনও যোগ নেই। পাশাপাশি, গণধর্ষণ-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও নীরব কেন, সেই প্রশ্নে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও এই ঘটনায় রাজ্য দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধীদের পাল্টা নিশানা করেছে তৃণমূল।

    কলেজে এই ‘নির্যাতিতা’ ছাত্রীর একা যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিধায়ক মদন। বিতর্কের মুখে দল তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, তারই জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে মদন লিখেছেন, ‘আমার মন্তব্যের জন্য দুঃখিত। ওই মন্তব্যে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ কিন্তু এরই মধ্যে নতুন করে বিতর্ক বেধেছে সেচমন্ত্রী মানসের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন ও প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মানস বলেছেন, “ইরান-ইজ়রায়েলের যুদ্ধ হচ্ছে। পাকিস্তান হামলা করছে। পহেলগাম হামলার অভিযুক্তেরা অধরা। আর বাংলার দিকে তাকান। ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলেই গেল গেল, গেল রে! কী সর্বনাশ! ঘটনা তো ঘটে। নিজের পরিবারেও ঘটে। এগুলো সমাজের সঙ্কট।”

    নির্দিষ্ট করে কোন ঘটনা ‘ছোট’ তা না-বললেও, গণধর্ষণ-কাণ্ডের আবহে মানসের ওই মন্তব্যের পরেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডকে মুখ্যমন্ত্রী ‘ছোট ঘটনা’ বলেছিলেন। আর জি কর থেকে আইন কলেজ, ধর্ষণ আসলে তৃণমূলের কাছে ছোট ঘটনা। তৃণমূল যে ভাবে সমাজকে দেখছে, সেটাই সেচমন্ত্রীর মন্তব্যে উঠে এসেছে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, “অপরাধী সব সময় চায় অপরাধকে ধামাচাপা দিতে। আর তাঁরা তৃণমূলের সম্পদ। তাই এর বাইরে কথা বলার মতো যোগ্যতা সেচমন্ত্রী বা তৃণমূলের কোনও নেতারই নেই।”

    বিতর্কের মুখে মানস অবশ্য তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলের পাশাপাশি তিনিও আইন কলেজের ঘটনার কড়া নিন্দা করছেন, পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই মানস বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী কখনই এমন ঘটনা বরদাস্ত করেন না। আমার মন্তব্যের সঙ্গে কসবার কোনও যোগাযোগ নেই। কসবার ‘ক’ উচ্চারণ করিনি! ঘটনা মানেই কি কসবা?” প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

    গণধর্ষণ-কাণ্ডকে সামনে রেখে অব্যাহত বিরোধীদের পথের প্রতিবাদ। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ কর্মসূচিতে পদযাত্রা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। পরে সভা থেকে তিনি বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর নিয়ে ফট-ফট করেন (মুখ্যমন্ত্রী)। অথচ পাঁচ দিন হয়ে গেল আইন কলেজের ঘটনার। ভাইপো বাহিনী রয়েছে। আপনার মুখ বন্ধ!” মমতার উদ্দেশে বিরোধী নেতার আরও কটাক্ষ, “দিঘায় (রথযাত্রা উপলক্ষে) এসে ভেবেছিলেন কৃতিত্ব নেব। হিসেব গোলমাল করে দিল ভাইপো বাহিনী। আপনি ছুটে পালিয়েছেন!” বিজেপি এ দিন গিরিশ পার্কে রাজ্য প্রশাসনকে নিশানা করে প্রতীকী ভাবে ‘পচা আলু’ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে আজ, বুধবার রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার ডাকে ‘কসবা চলো’ কর্মসূচিতে থাকার কথা শুভেন্দু, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ প্রমুখের।

    গণধর্ষণ-কাণ্ডে সিপিএমের বিভিন্ন গণসংগঠন এ দিনও রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কসবা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিআইয়ের ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠন। শিলিগুড়িতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “আর জি কর-কাণ্ডের সময় থেকে আমরা হুমকি সংস্কৃতির কথা শুনেছিলাম। আসলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তোলাবাজি, গুন্ডারাজ, ধর্ষণরাজ কায়েম করার জন্য একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছে তৃণমূল।” সিপিএম, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন-সহ বিভিন্ন বাম দল ধর্ষণে অভিযুক্ত কার্তিক মহারাজকে গ্রেফতারের দাবিও তুলেছে।

    বিরোধীদের অবশ্য পাল্টা নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, “মধ্যপ্রদেশের সরকারি হাসপাতালে এক নার্সকে খুন করা হয়েছে। সেখানকার পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। বিজেপির তথ্য অনুসন্ধানী দল সেখানে যাক। এখানে বিচ্ছিন্ন কোনও সামাজিক অপরাধ হওয়া মাত্র পুলিশ গ্রেফতার করে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)