দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা দিন–দিন বাড়ছে। প্রতিমাসে ১৫-২০ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। কোনও মাসে আবার এই সংখ্যা বেড়েও যাচ্ছে। সোমবার জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের শৌচালয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সন্তান প্রসবের ঘটনার পরে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে।
হাসপাতালে যে সমস্ত অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকারা আসছে, তাদের মধ্যে অনেকেই বিবাহিত! জলপাইগুড়ি জেলায় প্রসূতি মৃত্যুর হার বছরে ৫.৫ শতাংশ। এর পরে নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকলে মৃত্যুর হারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। পাশাপাশি অল্পবয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ফলে নাবালিকাদের দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
এই সার্বিক সমস্যাগুলির সমাধান হিসেবে এ বার বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বার থেকে কোনও নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মেয়েটির মানসিক চিকিৎসাতেও জোর দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, অন্তঃসত্ত্বার পরিবারের সদস্যদেরও কাউন্সেলিং করা হবে হলে জানা গিয়েছে।
সোমবার বিকেলে টিউশন পড়তে যায় জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাসিন্দা নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। সেখানেই তার হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হয়। বাড়ি ফিরে আসে ওই ছাত্রী। ব্যথা বাড়তে থাকায় পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই সময়ে নাবালিকা শৌচালয়েই সন্তান প্রসব করে। ঘটনাটি কর্তব্যরত নার্স এবং চিকিৎসকের নজরে আসতেই দ্রুত নাবালিকা এবং সদ্যোজাতকে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনায় হতভম্ব নাবালিকার মা। তাঁর দাবি, এ ব্যাপরে তিনি আগে থেকে কিছুই জানতেন না। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন। দাদুর কারণেই এমন ঘটনা বলে অনুমান মায়ের।
ঘটনার পর থেকেই মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। যা স্পষ্ট হলো হাসপাতালের এমএসভিপি কল্যাণ খানের কথায়। তিনি বলেন, ‘দিন দিন এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতি মাসে ১৫-২০ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৬–র মধ্যে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এত কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার দরুন নাবালিকার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যারা হেনস্থার শিকার হচ্ছেস তাদের এই সমস্যা আরও বেশি।’কোন কোন ক্ষেত্রে নাবালিকাদের মানসিক প্রভাব বেশি পড়ে?
জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলছেন, ‘এমন অনেক কেস আমার কাছে এসেছে। দেখা গিয়েছে, পরিবারেরই কোনও ব্যক্তির দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে নাবালিকা। পরিবার জড়িত থাকায় ওই ঘটনা কাউকে বলতে পারছে না। আবার যাকে খুব বিশ্বাস করছে, ভালোবাসছে, তার দ্বারাও এমন ঘটনা ঘটলে নাবালিকার উপর মানসিক ভাবে প্রভাব পড়ে অনেক বেশি। ধর্যণের ঘটনায় মানসিক ও শরীরিক ইমপ্যাক্ট সবচেয়ে বেশি।’
এমন ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বর্তমান সময়ে মোবাইল অনেকটাই দায়ী। সেখানে প্রতিনিয়ত উত্তেজক ছবি–ভিডিও আসছে। তার প্রভাব পড়ছে নাবালক–নাবালিকাদের উপরে।’ তাঁর মতে, ‘এটা শুধুমাত্র কাউন্সিলিং–এর বিষয় নয়। এমন ঘটনা গোড়াতেই যাতে আটকানো যায়, তার জন্য সার্বিক ভাবে সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।’ শৌচালয়ে প্রসবের ঘটনা প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার সুদীপ ভদ্রর বক্তব্য, ‘ইতিমধ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নাবালিকার সঙ্গে কথা বলা হবে।’