• বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতি পদে কে? শমীক না সুকান্ত? বাড়ছে জল্পনা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ জুলাই ২০২৫
  • রাজ্য সভাপতি পদে আর মেয়াদ বাড়ছে না বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের। তাঁর পদে অভিষিক্ত হতে চলেছেন বিজেপির রাজ্য সভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। সম্প্রতি বিজেপির অন্দরে এমনই জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে সেই জল্পনা কতটা সত্যি হতে চলেছে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই দিন। অর্থাৎ আগামী ৩ জুলাই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    সামনেই ২১ জুলাই। ওইদিন সাড়ম্বরে ঐতিহাসিক শহীদ দিবস পালন করবে তৃণমূল। তার আগেই রাজ্য সভাপতি নির্বাচন সেরে রাখতে চাইছে বিজেপি। তবে নির্বাচনের কথা বলা হলেও দলীয় পদ্ধতি মেনে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রার্থী হিসেবে মাত্র একজন সদস্যই থাকবেন বলে সূত্রের খবর। সর্বসম্মতিক্রমে সেই মনোনীত সদস্যকেই দলের পরবর্তী রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে।

    গত বছরেই সুকান্ত মজুমদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এতদিনে দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচন নিয়ে গেরুয়া শিবিরে কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি। অবশেষে দীর্ঘ একবছর ধরে জল্পনা চলার পর এবার যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি মনোনীত করা হচ্ছেই, তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে মঙ্গলবার। দলের রিটার্নিং আধিকারিক তথা বিধায়ক দীপক বর্মন বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়েছেন। ২ জুলাই, বুধবার সভাপতি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে। এরপর ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার নির্বাচন এবং সেই সংক্রান্ত ঘোষণা করা হবে।

    কে দলের পরবর্তী সভাপতি হবেন, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে এখনও জানা না গেলেও শমীক ভট্টাচার্যের নাম চর্চায় থাকার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বাসভবনে শমীককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের সময় বিজেপির এই সিনিয়র নেতাকে ডাকা নিয়ে দলের অন্দরমহলে জল্পনা বাড়ছে। অনেকে ধারনা করছেন, হয়তো শমীক ভট্টাচার্যই সুকান্ত পরবর্তী সম্ভাব্য রাজ্য সভাপতি। যদিও এই বৈঠক নিয়ে শমীকের দাবি, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তিনি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত কথা জানাতেই নাড্ডার কাছে গিয়েছিলেন। যদিও শমীকের সেই দাবি কতটা সত্যি, তা বোঝা যাবে আগামী ৩ জুলাই।

    প্রসঙ্গত, বিজেপির দলীয় সংবিধান অনুযায়ী একজন রাজ্য সভাপতির মেয়াদ থাকে তিন বছর। সেই মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে দ্বিতীয়বার আরও তিন বছর সভাপতি করার পথ খোলা থাকে। রাহুল সিনহা এবং তাঁর পরবর্তী সময়ে দিলীপ ঘোষ এভাবেই দুইবার করে রাজ্য সভাপতি ছিলেন। কিন্তু সুকান্তের ক্ষেত্রে মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য সংগঠনের ভার অন্য কাউকে দেওয়ার পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

    এদিকে সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি অংশ সুকান্ত মজুমদারকেই দ্বিতীয়বার সভাপতি পদে রাখার পক্ষপাতী। কারণ, বছর ঘুরতেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। এই সীমিত সময়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলে তিনি কতটা সামলে উঠতে পারবেন, নাকি দল আরও বিপাকে পড়বে, তা নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে শীর্ষ নেতৃত্বে। সময় হাতে খুব কম, তাই সুকান্তেই ভরসা রাখার পক্ষে যুক্তি খুঁজছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি অংশ।

    অন্যদিকে, রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের পাশাপাশি একই সময়ে রাজ্যের ৪২ লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি থেকে একজন করে জাতীয় পরিষদের সদস্য মনোনীত করা হবে। যদিও সেক্ষেত্রে দলীয় পদ্ধতি মেনে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং মনোনয়নের মাধ্যমেই জাতীয় পরিষদের সদস্য চূড়ান্ত করা হবে। এমনটাই সূত্রের খবর।

    উল্লেখ্য, ২০২৬-এর আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে শক্তিবৃদ্ধি করতে চাইছে বঙ্গ-বিজেপি। কিন্তু, সেই লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে গেরুয়া শিবির। বিগত দিনে কয়েকটি নির্বাচনে সেই চিত্র স্পষ্ট হয়েছে বার বার। এমতাবস্থায় বুথে বুথে সংগঠন বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই সুকান্ত-শমীক-শুভেন্দুদের কাছে। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরেছেন। দলের শীর্ষ নেতারা বঙ্গ বিজেপি নেতাদের একাধিক ভোকাল টনিক দিয়েছেন। এই মর্মে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল, সকলেই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)