বৃদ্ধ দম্পতি যাকে নিজের ছেলের মতো দেখতেন, টাকা ও সোনার গয়নার লোভে সে-ই খুন করেছিল তাঁদের। মঙ্গলবার চিৎপুরের দম্পতি খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল সঞ্জয় সেন নামে ওই যুবক। বুধবার তাকে ফাঁসির সাজা শোনালেন শিয়ালদহ আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস। আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক দাসই। আরজি কর কাণ্ডে সাজা ঘোষণার সময়ে বিচারক জানিয়েছিলেন, ওই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। সেই কারণে সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়েছিলেন তিনি। আইনজীবীদের একাংশের মতে, চিৎপুরের দম্পতি খুনে ফাঁসির সাজা দেওয়ায় ওই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেই মনে করেছেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, ২০১৫ সালের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। চিৎপুরের রানি দেবেন্দ্রবালা রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় অধ্যাপক প্রাণগোবিন্দ দাস এবং তাঁর স্ত্রী রেণুকার ক্ষতবিক্ষত দেহ। দুর্গন্ধে জেরবার হয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে দু’জনের পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছিল। অভিযোগ, খুনের পরে প্রচুর সোনার গয়না এবং টাকা লুট করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতী।
সূত্রের খবর, নিহত প্রাণগোবিন্দের ভাইপো পার্থ সেনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। দম্পতির পুত্রসম সঞ্জয় সেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জবানবন্দি অনুযায়ী একটি গোপন জায়গা থেকে ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নগদ এবং অনেক সোনার গয়না উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, জেরায় সঞ্জয় কবুল করেছিল, টাকা ও গয়নার লোভেই সে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করে। সঞ্জয়ের বাড়ির কাছের একটি পুকুর থেকে খুনের অস্ত্র এবং রক্তমাখা পোশাকও উদ্ধার হয়েছিল। এ ছাড়াও ফিঙ্গার প্রিন্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট-সহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ যাচাই হওয়ার পরে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
পুলিশ জানায়, শুনানিতে ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সঞ্জয় ওই বৃদ্ধ দম্পতির পরিচিত। তাঁদের ফ্ল্যাটে তার নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। ওই দম্পতিও তাঁকে ছেলের মতো দেখতেন। অভিযোগ, সেই সুযোগই নিয়েছিল সঞ্জয়। দীর্ঘ দশ বছর ধরে শুনানি শেষে এ দিন ফাঁসির সাজা দিল আদালত।