• কী ভাবে জল ঢুকল মেট্রোর পাতালপথে? কোথায় ফাটল? যাত্রীভোগান্তির পর খতিয়ে দেখছেন কর্তৃপক্ষ
    আনন্দবাজার | ০২ জুলাই ২০২৫
  • বৃষ্টিতে মেট্রোর পাতালপথও কী ভাবে ভেসে গেল? কী ভাবে জল ঢুকল ট্র্যাকে? গত সোমবার দীর্ঘ ক্ষণ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীভোগান্তির পর বুধবার খতিয়ে দেখলেন কর্তৃপক্ষ। মেট্রো সূত্রে খবর, মেট্রোর আধিকারিকদের নিয়ে এই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। সেই কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে জেনারেল ম্যানেজারকে।

    সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন, সকালের ব্যস্ত সময়ে ব্যাহত হয়েছিল মেট্রো পরিষেবা। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘণ্টা কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সম্পূর্ণ পথে বন্ধ ছিল মেট্রো চলাচল। ভাঙা পথে চলে মেট্রো। প্রবল যাত্রীদুর্ভোগের মধ্যে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, চাঁদনি চক এবং সেন্ট্রাল স্টেশনের মাঝে জল দেখা গিয়েছে। যাত্রীসুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই পরিষেবা আংশিক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল।

    মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, ভাঙা পথে চলার সময়েও মেট্রো পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পরে মেট্রো এসেছে। ফলে প্রবল ভিড় হয়েছে। ট্রেনের ভিতরেও একই অবস্থা। ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, এ সব কারণে ঠিকমতো এসি কাজ করেনি। ফলে দরদর করে ঘেমেছেন যাত্রীরা। সপ্তাহের প্রথম দিনেই সঠিক সময়ে অফিস, স্কুল, কলেজে পৌঁছোতে পারেননি তাঁরা। থিকথিকে ভিড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা হওয়ায় অনেকে গন্তব্যের আগেই কোনও এক স্টেশনে নেমে গিয়েছেন।

    ওই ঘটনার পর মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, চাঁদনি চক এবং সেন্ট্রালের মাঝে ট্র্যাকে যে জল জমতে পারে, তা আগে জানা ছিল না। সোমবারই বিষয়টি নজরে আসে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে মুহূর্তে বিষয়টি নজরে এসেছে, সেই মুহূর্তেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যাত্রীসুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর মেট্রো কিন্তু কখনওই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। একটি অংশে বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে মেট্রো আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাম্প এনে জল বার করে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছেন।’’

    মেট্রোয় জলযন্ত্রণার ছবি অবশ্য নতুন নয়। গত শনিবারই প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো (ব্লু লাইন)-র সুড়ঙ্গে ট্র্যাকের মাঝের নিকাশি নালায় জল উপচে পড়ায়। দমদমমুখী মেট্রো লাইনে যতীন দাস পার্ক এবং নেতাজি ভবন স্টেশনের মাঝে জলের পাইপ ফেটে ওই বিপত্তি ঘটে। এ রকমই ঘটনা ঘটেছিল গত বছরেও। ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে রাতভর বৃষ্টি হয়েছিল শহরে। তার জেরে বিপর্যস্ত হয়েছিল ব্লু লাইনের মেট্রো। বৃষ্টির জল পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়ায় প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ভাঙা পথে মেট্রো চলেছিল। শুধু স্টেশনে নয়, পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেডের মধ্যেকার ট্র্যাকেও জল থই থই করছিল। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে মেট্রো স্টেশনের ভিতরে জল ঢুকে গিয়েছিল। দেওয়ালের ফাটল দিয়েও জল চুঁইয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছিল সেই দিন। শেষমেশ পাম্প এনে লাইন এবং স্টেশন থেকে জল বার করে মেট্রো।

    পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, মেট্রোর সুড়ঙ্গের ঠিক উপরেই কলকাতা পুরসভার নিকাশি নালা রয়েছে। ইটের তৈরি শতাব্দীপ্রাচীন নর্দমায় প্রচুর পরিমাণে পলি জমে যাওয়ায় উপচে পড়েছিল বৃষ্টির জল। সেই জলই নর্দমার গর্ত দিয়ে মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর পুরসভাও নর্দমা মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিল। তবে তাদেরও বক্তব্য, মেট্রোর ‘ডি-ওয়ালে’ ফাটল ছিল। সেখান থেকেই জল ঢুকেছে। পার্কস্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের ফাটল মেরামত করা হলেও, বাকি স্টেশনগুলিতে কেন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হল না, সোমবারের ঘটনার পর এই প্রশ্নই তুলেছিলেন অনেকে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)