• মাত্রাছাড়া খরচ, ইলেকট্রিক বাসের বিকল্প হিসাবে আসছে সিএনজি বাস, নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন
    আনন্দবাজার | ০২ জুলাই ২০২৫
  • পরিবেশবান্ধব যানবাহনের স্বপ্ন নিয়ে বছর সাতেক আগে কলকাতায় প্রথম বার চালু হয়েছিল ইলেকট্রিক বাস। পরিবেশের ক্ষতি না করেই যাত্রী পরিবহণের লক্ষ্য ছিল পরিবহণ দফতরের। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা হতাশাজনক হওয়ায় এ বার ইলেকট্রিক বাস থেকে সরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, নতুন করে আর কোনও ই-বাস কিনবে না রাজ্য। সম্প্রতি নবান্নে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে।

    বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের অধীনে বিভিন্ন সরকারি ডিপোয় রয়েছে ৮০টি ইলেকট্রিক বাস। এই বাসগুলি ৯ মিটার ও ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের, এবং প্রতিটির দাম ৯৫ লক্ষ থেকে ১.৩০ কোটি টাকা। বাস নির্মাণকারী সংস্থার দাবি ছিল, সম্পূর্ণ চার্জে বাসগুলি ১০০–১১০ কিমি পর্যন্ত চলতে পারে এবং অন্তত ১২ বছর যাত্রী পরিবহণে সক্ষম। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়েই ব্যাটারির ক্ষমতা কমে গিয়ে মাইলেজ নেমে এসেছে ৭০–৮০ কিমিতে। এর সঙ্গে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং যন্ত্রাংশের অভাবজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়া। প্রতিটি ই-বাসে রয়েছে তিনটি করে ব্যাটারি, যার এক-একটির দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। ব্যাটারি দুর্বল হলে বাস কার্যত অচল হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থা, যার ফলে বাজারে একচেটিয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি নবান্নে পরিবহণ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হয়। অর্থনৈতিক চাপের মুখে এমন ব্যয়বহুল ব্যবস্থাকে আর টানতে চাইছে না রাজ্য সরকার।

    তবে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বার বিকল্প হিসেবে সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচরাল গ্যাস) চালিত বাসের দিকে ঝুঁকছে রাজ্য। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ২০০টি সিএনজি চালিত এসি বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাসের দাম আনুমানিক ৪২ থেকে ৪৪ লক্ষ টাকা। এই বাসগুলি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, দীর্ঘস্থায়ীও। ব্যাটারি সমস্যার ঝামেলা ছাড়াই অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত রাস্তায় পরিষেবা দিতে পারবে এই বাসগুলি। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে আসন্ন দুর্গোৎসবের আগেই শহরের রাস্তায় নামবে ৩০–৪০টি নতুন সিএনজি বাস। তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন, এই বাসগুলির গ্যাস সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত সিএনজি স্টেশন এখনও গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে শুধুমাত্র কসবা ডিপোতে একটি সিএনজি পাম্প রয়েছে। টালিগঞ্জ, বারাসত ও হাওড়ায় স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি এখনও।

    রাজ্যের এই নতুন সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ১৪টি ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশনের ভবিষ্যৎ। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি এই পরিকাঠামো অব্যবহৃত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে শুরু হলেও প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ইলেকট্রিক বাসের অধ্যায়ে আপাতত ইতি টানছে রাজ্য। তার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী এবং টেকসই পদ্ধতির সন্ধানে এ বার সিএনজির পথে হাঁটছে নবান্ন। এখন দেখার, নতুন এই প্রয়াস কতটা কার্যকর হয় শহরের পরিবহণ ব্যবস্থায়।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)