রাজ্যকে অশান্ত করতে বিজেপির নতুন অস্ত্র ‘তুলসী গাছ'!
আজকাল | ০৩ জুলাই ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের একাধিক প্রান্তে ধারাবাহিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও হিংসার ঘটনা। মালদার মোথাবাড়ি, মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ, দার্জিলিং-এর মতিগাড়ার পর এবার কলকাতার উপকণ্ঠ মহেশতলায় রক্তাক্ত সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল পরিস্থিতি। প্রতিটি ঘটনাতেই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ছাপ স্পষ্ট, আর এবার সেই রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি তুলসী গাছ।
ঘটনার সূত্রপাত ১১ জুন, যখন ঈদের পর ফল বিক্রেতা শেখ জুলেত তাঁর পুরনো ঠেলা গাড়ির জায়গায় একরাতের মধ্যে একটি তুলসী মঞ্চ বসানো দেখতে পান স্থানীয় মন্দিরের সামনে। সামান্য কথা কাটাকাটির মধ্যেই ঘটনার বহর বাড়ে, এবং দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে পাথরবৃষ্টি, আগুন লাগানো ও দোকানবাড়ি ভাঙচুর। আশ্চর্যের বিষয়, স্থানীয় থানার একেবারে পাশে ঘটলেও পুলিশ চার ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। এলাকারই এক তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হরিমোহন সিংহ ও এক আরএসএস কর্মীর নাম উঠে এসেছে মঞ্চ স্থাপনের পেছনে। পরবর্তী তদন্তে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচ জন আরএসএস-এর সক্রিয় সদস্য। উদ্ধার হয়েছে বিস্ফোরক তৈরির উপকরণও। এই হিংসার আবহে বিজেপি তুলসী গাছকে রাজনৈতিক প্রতীক করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিধানসভায় তুলসী নিয়ে বিক্ষোভ, মহেশতলায় মঞ্চ পরিদর্শন – সব মিলিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানোর স্পষ্ট চেষ্টা। তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনাকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর আঘাত বলে মনে করছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক ও বিভাজন তৈরি করার এই কৌশল বিজেপির দীর্ঘমেয়াদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অংশ। তুলসী গাছকে হিন্দু ধর্মের শ্রদ্ধেয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে একটি ফুটপাত দখলের ঘটনাকে ধর্মীয় সংঘাতে পরিণত করা শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, তা সম্পূর্ণরূপে অশান্তি সৃষ্টির কৌশল।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী রাজ্যে এই ধরনের পরিকল্পিত উস্কানি শুধু ভোটের রাজনীতির জন্য নয়, বরং সামাজিক সংহতির উপর বড়সড় আঘাত। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও কঠোর পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।