টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ষষ্ঠী মণ্ডল—বয়সে বৃদ্ধা, শরীরে নেই বলার মতো শক্তি, চোখে তীব্র অনিশ্চয়তার ছায়া। বাঁকুড়ার জগদ্দল্লা ২-এর বাইন্দকা গ্রামে দিনের পর দিন অর্ধাহারে থেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এই একরোখা মা। পাশে অসুস্থ একমাত্র ছেলে তাপস, বয়স ২৭—যে এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতেও পারে না। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে, সারা শরীরে অপুষ্টির ছাপ। ঘরে অন্ন নেই, ওষুধ নেই, সহানুভূতিও নেই। আছে শুধু দীর্ঘ প্রতীক্ষা—কবে কেউ কিছু শুনবে! ষষ্ঠীর দিন কাটে হাতে পেতে—ভিক্ষা করে। নিজের ছেলের জন্য, নিজের ন্যূনতম পেট ভরানোর জন্য। অগোছালো চুল, মুখে অস্থিরতা—এই মানুষটা শুধুই এক মা নন, যেন এক জীবন্ত অভিশাপের প্রতিচ্ছবি। বিয়ের পর তাপসকে জন্ম দেওয়ার পরেই নিখোঁজ হয়ে যান তাঁর স্বামী।
ষষ্ঠীর আধার কার্ড নেই, নেই রেশন, নেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভরসা। আধার না থাকায় কোনও প্রকল্পেই নাম নেই এই মা-ছেলের। ফলে দিনের পর দিন কাটছে না খেয়ে। গত সপ্তাহে লাগাতার বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে ষষ্ঠীর মাথার উপরের কোনওরকমে টিকে থাকা ছাদ। আর তার পরেই ওই মা-ছেলের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় বাইন্দকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে। স্কুল বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া এই পরিবারটির অবস্থার প্রসঙ্গে ওই বাইন্দকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তিলোত্তমা পরামানিক বলেন, “স্কুলের ঘরেই থাকছেন এখন। আমরা একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করছি, কিন্তু সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়।” আরও অবাক করার বিষয় হল —গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জানেনই না কিছু!