কলকাতার মতো শহরে এমন মশার হদিশ মিলবে, তা ভাবতেই পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে যে মশার প্রকোপ দেখা যায়, সেই বিপজ্জনক মশার খোঁজ এবার পাওয়া গেল খাস কলকাতার বুকেই। পুরসভার পতঙ্গবিদদের পরীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। কলকাতার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাওয়া গিয়েছে বিরল প্রজাতির এডিস ভিকটেটাস মশার লার্ভা।
জানা যাচ্ছে, শহরের নিয়োগী রোডের একটি বাড়ির ফুলের টবেই মেলে সেই লার্ভা। প্রায় দশ দিন আগে সন্দেহ হওয়ায় সেটিকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের ল্যাবরেটরিতে। সেখানে ‘মশা ঘরে’ রাখা হয় নমুনাটি। পর্যায়ক্রমে লার্ভা থেকে পিউপা ও পরে প্রাপ্তবয়স্ক মশা বের হয়। তারপরই নিশ্চিত হন পতঙ্গবিদরা এটি সাধারণ কোনও দেশি মশা নয়। কলকাতা পুরসভার এক পতঙ্গবিদ জানান, এটি ডেঙ্গি ছড়াতে সক্ষম এক অত্যন্ত ভয়ানক মশা। তিনি জানান, এডিস এজিপ্টাইয়ের মতোই এটি ডেঙ্গির বাহক। কিন্তু শুধু ডেঙ্গি নয়, এই মশার শরীরে থাকা ভাইরাস মানুষের রক্তে ঢুকে গেলে জিকা, চিকনগুনিয়া ও ইয়েলো ফিভারের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এখনই আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানান তিনি। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত জিকা বা পীতজ্বরের প্রকোপ দেখা যায়নি। যদিও এই মশার উপস্থিতি বাড়তে থাকলে আগামী দিনে উদ্বেগ বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই নিয়ে পরপর দুই বছর কলকাতায় এই বিরল প্রজাতির মশা পাওয়া গেল। পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, গত বছর দক্ষিণ কলকাতার কিছু এলাকায় প্রথম এই প্রজাতির খোঁজ মেলে। এবার ফের মিলে যাওয়ায় তাঁরা যথেষ্ট সতর্ক হয়ে উঠেছেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার প্রজাতি নিয়ে গবেষণায় নেমেছে পুরসভা। সেই গবেষণার ফলেই এই নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে।
মশা দমনে পুরসভা ইতিমধ্যেই অভিযানে নেমেছে। শহরের নানা খালে নৌকা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়। বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে জমা জলের উৎস খুঁজে বার করে তা নিষ্কাশনের দিকেও। স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে নজর রাখতে, কোথাও জল জমে আছে কি না।