• ম্যালেরিয়া রোগীদের উপর ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থা, জেলাজুড়ে খোলা হল ৮০০ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ
    বর্তমান | ০৩ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে এবং রোগীর খেয়াল রাখতে এবার নদীয়া জেলায় ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। জেলাজুড়ে খোলা হয়েছে প্রায় ৮০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেই গ্রুপে রয়েছেন আশাকর্মী, এএমএম, সুপারভাইজার, পঞ্চায়েত প্রধান প্রমুখ। নদীয়া জেলার গ্রামীণ এলাকায় ৭৫১টি সাব-সেন্টার রয়েছে। জেলার প্রতিটি সাব-সেন্টার ভিত্তিক গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর হদিশ পাওয়া যায়। এছাড়াও, শহর এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এই ডিজিটাল গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশারিতে এক বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল স্প্রে করছেন। যাতে সেই মশারির সংস্পর্শে এলেই মশা মরে যায়। এছাড়া, ম্যালেরিয়া টেস্টেও জোর দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে টেস্ট করেই আশাকর্মীরা ম্যালেরিয়া রিপোর্ট কার্ড পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে নদীয়া জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। 

    নদীয়া জেলার সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরাশর পোদ্দার বলেন, দ্রুত ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের হদিশ পেতে এবং তাঁদের চিকিৎসা শুরু করতেই এই গ্রুপগুলি খোলা হয়েছে। এর ফলে রোগীদের তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বাড়ে। সেইসঙ্গে রোগীদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া হয় ওই গ্রুপে। পাশাপাশি, এবার থেকে রিপোর্ট নেগেটিভ হোক বা পজেটিভ, দুই-ই রোগীদের জানানো হচ্ছে।

    মশাবাহিত ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থা অভিনব বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য মহল। চলতি বছরে নদীয়া জেলায় প্রায় ৭০জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর হদিশ মিলেছে। যার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভিনরাজ্য থেকে আক্রান্ত হয়ে নদীয়া জেলায় ফিরেছেন। এমনকী, আফ্রিকা, সৌদি আরব থেকে ফেরা ব্যক্তিরাও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগ রোগীর রাজ্যের বাইরে যাওয়ার ট্রাভেল হিস্ট্রি রয়েছে।

    স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজ বিভাগের আধিকারিক পৌলমী ঘোষ বলেন, জেলার প্রতিটি সাব-সেন্টারভিত্তিক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। যাতে গ্রামে বাইরে থেকে কেউ এলে সেই তথ্য যেন সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার করা হয়। এর ফলে স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মীরা বিষয়টি সম্পর্কে দ্রুত অবগত হতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দ্রুত ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।

    এবার ম্যালেরিয়া পরীক্ষার জন্যও বিশেষ রিপোর্ট কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় কারও শরীর খারাপ হলে, আশাকর্মীরা তাঁর বাড়ি গিয়ে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে পারবেন। র‍্যাপিড ডায়গনস্টিক টেস্ট বা আরটিডির মাধ্যমে আশাকর্মী রোগীর বাড়িতে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে পারবেন। এমনকী, ম্যালেরিয়া রিপোর্ট নেগেটিভ না পজেটিভ, তা তৎক্ষণাৎ জানিয়েও দিতে পারবেন তাঁরা। সেইমতো রোগীকে একটি রিপোর্ট কার্ড দেওয়া হবে স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফ থেকে। তবে আগে রিপোর্ট নিতে স্থানীয় হাসপাতালে যেতে হতো। যার ফলে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়ে যেত। শুধু তাই নয়, ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে যে সমস্ত এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের সংখ্যা বেশি ছিল, সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের মশারিতে ডেলটা মেট্রিক নামে কেমিক্যাল স্প্রে করা হচ্ছে। যাতে মশা সেই মশারির সংস্পর্শে এলেই মারা যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)