নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়া জেলায় আমন ধানের বীজতলা তৈরির কাছে যথেষ্ট গতি এসেছে। গত কয়েকদিনে জেলার অর্ধেক বীজতলা তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে কৃষিদপ্তর জানিয়েছে। আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় এবার জেলায় আমন চাষের এলাকা বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষিদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা দেবকুমার সরকার বলেন, জুন মাসজুড়ে বাঁকুড়ায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পরপর নিম্নচাপের জেরে ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে যায়। তারফলে জেলায় আমনের মোট বীজতলার ৫০শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিটাও এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গতবছর জেলায় তিন লক্ষ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছিল। এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে তিন লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর হতে পারে।
ওন্দার চাষি বিষ্ণুপদ মণ্ডল, সিমলাপালের তুষার পাত্র বলেন, গতবার গ্রীষ্মে টানা দাবদাহ চলেছিল। এবার চৈত্র-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় গরম সেভাবে বোঝা যায়নি। গতবার বৃষ্টির অভাবে আমরা সময়ে বীজতলা তৈরি করতে পারিনি। ফলে চাষ শুরু হতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। বৃষ্টির অভাবে উঁচু জমিতে চাষ না হওয়ায় সামগ্রিকভাবে এলাকা কমে যায়। এবার সময়ে ধান বীজ বপন করা গিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চারা রোপণও হয়ে যাবে।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে জুন মাসে বাঁকুড়ায় গড়ে ৩৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা জেলার গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় অনেকটাই বেশি। গত পাঁচ বছরে জেলায় জুন মাসের গড় বৃষ্টির পরিমাণ ২৪৮মিলিমিটার। গতবছর বাঁকুড়ায় জুন মাসে মাত্র ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল। এবার সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ ৫১১মিলিমিটার। ফলে এক মাসে গতবারের তুলনায় বাঁকুড়া শহর ও আশপাশে প্রায় ন’গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তা জেলায় আমনের বীজতলা তৈরিতে গতি এনে দিয়েছে। শেষবার ২০২১সালে বাঁকুড়ায় জুন মাসে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। সেবার এক মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৬১৩ মিলিমিটার। ২০২২ ও ২০২৩ সালের জুন মাসগুলিতে যথাক্রমে ১২৫ ও ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, খরাপ্রবণ বাঁকুড়ায় এখনও সেভাবে সেচখাল খনন করা হয়নি। ফলে জেলার সিংহভাগ চাষিকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। বৃষ্টির জলেই তাঁদের চাষাবাদ করতে হয়। বর্ষায় শুধুমাত্র বেশি বৃষ্টি হলেই যে তা চাষের কাজে লাগবে তা নয়। ওই পরিমাণ বৃষ্টি কত সময় ধরে হচ্ছে তার উপর চাষাবাদ নির্ভর করে। বাঁকুড়ায় এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩০০মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে। ওই বৃষ্টি চাষিদের উপকারের বদলে ক্ষতিই করেছিল। অল্প অল্প করে বৃষ্টি মাসভর হলে চাষের কাজে লাগে। এবারের জুন মাসে ওই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। তারফলে আমনের বীজতলা করতে চাষিদের সুবিধা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত বীজতলা বা ‘সিড বেডে’ চারা কমবেশি একমাস থাকলেই তা জমিতে রোপণ করার উপযুক্ত হয়ে যায়। ফলে জুনের মতো জুলাই-আগস্ট মাসে বৃষ্টি হলে জেলায় ব্যাপক আমন চাষ হবে।