হয়তো প্রিয়জন আহত। নাম, পরিচয় জানানোর অবস্থায় নেই। তাই হয়তো খোঁজ মিলছে না। তেলঙ্গানার পাশামিলারমের বিস্ফোরণের পর নিখোঁজের দুই পরিবার এমনই আশায় বুক বাঁধছিল। দাসপুর থেকে তেলঙ্গানা পৌঁছতেই প্রায় বিলিন হল আশা।
মঙ্গলবার রাতেই দাসপুরের হরিরাজপুর থেকে তেলঙ্গানার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন অসীম টুডুর পরিবারের সদস্যেরা। পরিযায়ী ওই শ্রমিকের খোঁজ মিলছে না বিস্ফোরণের পর থেকেই। ঘটনার সময় অসীমের সঙ্গেই কারখানায় কাজ করছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর টুডু। নিখোঁজ তিনিও। আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি শ্যামসুন্দরের বাবা তারাপদ। অসীমের খোঁজে তেলঙ্গানা গিয়েছেন তাঁর ভাই অমিত। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন প্রতিবেশীরা। অমিতরা বুধবার প্রথমেই পৌঁছেছিলেন সঙ্গারেড্ডি হাসপাতালে। ভেবেছিলেন, হয়তো আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসীম ও শ্যামসুন্দর। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়তো নাম ঠিকানা বলতে পারেননি। তাই যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি আহতদের তালিকা দেখতেই প্রায় বিলিন হয় আশা। কাছাকাছি আরও কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বিস্ফোরণে আহতদের। সেই হাসপাতালগুলিতেও একে একে পৌঁছন অমিতরা। তবে কোথাও আহতের তালিকায় প্রিয়জনের নাম ছিল না।
অমিতদের সন্ধান পর্বে পাশে ছিল স্থানীয় প্রশাসন। খাবার , পানীয় জল থেকে শুরু করে থাকার জায়গা— যখন যা প্রয়োজন হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে তাই মিলেছে বলে জানিয়েছেন অমিতরা। সঙ্গারেড্ডি হাসপাতালেই সারি দিয়ে রাখা রয়েছে বিস্ফোরণে মৃতদের দেহ। বুকে পাথর চেপে সেখানেও পৌঁছেছিলেন অমিতরা। কিন্তু দেহগুলি এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে সনাক্ত করা মুশকিল। কটূ গন্ধে টেকা দায়। তেলঙ্গানা থেকে ফোনে অমিত বলেন, ‘‘দাদার সঙ্গে দিন কুড়ি আগে কথা হয়েছিল। দাদা চাষবাসের খোঁজ নিচ্ছিল। দাদা আমাকে একবার তার কর্মস্থলে আসতেও বলেছিল বেড়ানোর জন্য। তবে দাদার খোঁজ পেতে তেলঙ্গানায় দাদা কর্মস্থলে আসতে হবে ভাবিনি।’’
সোমবার রাতে হরিরাজপুর গ্রামে খবর পৌঁছনোর পর থেকেই অপেক্ষা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতে রান্নাও হয়নি। খাওয়া দাওয়া ভুলে প্রার্থনা করতে থাকেন হরিরাজপুর গ্রামের বাসিন্দারা। দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার হরিরাজপুরের ওই বাড়িতে যান ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস, দাসপুর ১ বিডিও সহ পুলিশ আধিকারিকরা। বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেয় শাসক দল তৃণমূল সহ বাম বিজেপি সব পক্ষই। এ দিন সকাল থেকেও অনেকেই ভিড় জমান।