• মনোজিৎদের শাস্তি দিল যে জিবি, তার বৈধতাই প্রশ্নে
    এই সময় | ০৩ জুলাই ২০২৫
  • দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে নিয়ম ভাঙাই কি দস্তুর! ২৫ জুন, বুধবার ক্যাম্পাসে গণধষর্ণের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এ বার কলেজ গভর্নিং বডির (জিবি) বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠল। বুধবার কলেজে গিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।

    কমিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চায় শেষ কবে পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছিল? উপাধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, উচ্চশিক্ষা দপ্তর দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েছে।

    তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা উপাধ্যক্ষের কাছে এই সংক্রান্ত জিবি-র সমস্ত রেজ়লিউশন ও নোটিসের কপি দেখতে চান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অফিস ঘর বন্ধ থাকায় জিবি-র কোনও নথিই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের হাতে উপাধ্যক্ষ এ দিন তুলে দিতে পারেননি।

    অন্য দিকে, কলেজ পরিচালন সমিতিতে উপাধ্যক্ষের নিকটাত্মীয়ের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন নিয়েও শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। এ সব নিয়ে জানতে নয়নাকে ফোন ও হোয়াট্যাসঅ্যাপ করলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

    সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে শেষবার পরিচালন সমিতি গঠনের জন্য ক‍লেজ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দু’জন প্রতিনিধি চান। তারপর আর কলেজের তরফে কোনও চিঠিই পাঠানো হয়নি।

    এ দিন ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি দলে থাকা আধিকারিকদের বক্তব্য, ২০১৭ সালে গঠিত কোনও কলেজ পরিচালন সমিতির মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার এতদিন পরেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার এমন নজির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত অন্য ১৫০ কলেজে নেই।

    তবে দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত আইন ২০১৭ অনুযায়ী, কলেজ পরিচালন সমিতির নির্দিষ্ট কোনও মেয়াদ নেই। তাই ছ’মাস করে দফায় দফায় জিবি-র মেয়াদ এখনও বাড়ছে।

    যদিও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের পাল্টা বক্তব্য, নতুন বিধি ২০১৭ সালে তৈরি হলেও বিধানসভায় তা পাশ হয়েছিল ২০১৮ সালে। তার আগেই কসবার আইন কলেজে জিবি গঠন হয়ে গিয়েছিল। তাই সাধারণ ভাবে এই কমিটির মেয়াদ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো বিধি মেনে ২০২১ সালেই শেষ হওয়ার কথা।

    তারপর বড়জোর ছ’মাস করে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো যেত। অর্থাৎ, ২০২২ সালেই নতুন জিবি গঠনের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জিবি প্রতিনিধিকেই ডেকে পাঠানো হয়েছে।’

    স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে কলেজ পরিচালন সমিতি গণধর্ষণের ঘটনায় মূল‍ অভিযুক্ত, প্রাক্তনী তথা শিক্ষাকর্মী মনোজিৎ মিশ্র ও তার দুই শাগরেদ প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জ়াইব আহমেদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার গ্রহণ করেছে, তারই বা কী হবে?

    আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে এসে নয়নার জিবি সংক্রান্ত নথি তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু কলেজের সংশ্লিষ্ট অফিস ঘর যদি বন্ধই থাকে, তা হলে সেই নথি আর কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

  • Link to this news (এই সময়)