বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
লাভের মুখ দেখতে দূরপাল্লার ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েছে রেল। ১ জুলাই থেকেই যা কার্যকর করা হয়েছে।
কতটা ভাড়া বেড়েছে? মেল ও এক্সপ্রেসের এসি কামরায় প্রতি ১০০ কিলোমিটার ভ্রমণে টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ২ টাকা খরচ করবেন যাত্রীরা। নন-এসি কামরার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কিলোমিটার যাত্রায় খরচ করতে হবে অতিরিক্ত ১ টাকা।
কিন্তু প্রশ্ন, ভাড়া বাড়লেও যাত্রী-সুরক্ষা বা যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে কি নজর দিচ্ছে রেল? সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় তেমন কোনও ছবি অবশ্য ধরা পড়েনি। চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। যা নিয়মিত অভিযোগ আকারে জমাও পড়ছে রেলের কাছে।
ধানবাদে এক আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত ২১ জুন চিত্তরঞ্জন থেকে পাটনা-ধানবাদ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটেন রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা অতনু রায়বর্মন। পরে জানতে পারেন, ট্রেনটি প্রায় দু’ঘণ্টা লেটে চলছে।
শেষে তাঁকে ধানবাদে যেতে হয় বাসে। ১ জুলাই, মঙ্গলবার দুপুরে অতনুর মোবাইলে রেলের একটি মেসেজ আসে। তাতে লেখা ছিল, তাঁর ট্রেনটি ডাইভার্ট হয়েছে। অতনুর প্রশ্ন, ট্রেন ডাইভার্ট হলে তার মেসেজ ১০ দিন পরে কেন আসবে?
আসানসোল-হাওড়া অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও ধানবাদ-হাওড়া কোলফিল্ড এক্সপ্রেস নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের মধ্যে একজন সায়ন দে বলেন, ‘এই দুই ট্রেনের, বিশেষ করে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের বাথরুম এত অপরিষ্কার যে তাতে যাওয়া যায় না।
কারণ, সকালে আসানসোল থেকে হাওড়া যাওয়ার পরে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস কিছুক্ষণ পরেই আবার হাওড়া থেকে রওনা দেয় শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস হিসেবে এবং বিকেলে ফিরে আবার সেটিই অগ্নিবীণা হিসেবে আসানসোলে আসে।
সময়ের অভাবেই এই ট্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা বা কারশেডে নিয়ে গিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কিছুই হয় না।’ সায়নের প্রশ্ন, ‘ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু ন্যূনতম যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য মিলছে কই?’
নিয়মিত প্রথম সারির দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়াত করেন অপূর্ব মাঝি নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, ‘এসি কামরায় দেওয়া চাদরগুলোর বেশিরভাগই পরিষ্কার থাকে না। দুর্গন্ধ বেরোয়।’
গত কয়েক বছর ধরে আসানসোল শিল্পাঞ্চল থেকে রোগী নিয়ে চেন্নাইয়ের একাধিক হাসপাতালে যান হেমন্ত দত্ত নামে এক যুবক। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘গুয়াহাটি–চেন্নাই, ভাগলপুর-যশবন্তপুর, পাটনা-এর্নাকুলাম, সাঁতরাগাছি-চেন্নাই সমেত একাধিক ট্রেনে সংরক্ষিত কামরায় যত যাত্রী থাকেন, একই পরিমাণ যাত্রী অসংরক্ষিত টিকিট নিয়ে ট্রেনের বাথরুম ও সংলগ্ন যাতায়াতের জায়গা দখল করে থাকেন।’
তাঁর অভিযোগ, এই ট্রেনগুলিতে যে খাবার দেওয়া হয় তার মানও কমেছে। ট্রেনের বাথরুম দখলের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে আসানসোল ডিভিশনের একজন টিকিট পরীক্ষক বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আরপিএফ, জিআরপি ব্যবস্থা নেয়। বাথরুম দখল না-করার জন্য আমরা যাত্রীদের বলেও থাকি।’
ট্রেন থেকে যাত্রীদের ব্যাগ চুরির ঘটনাও বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, কোচ অ্যাটেনডেন্টরা এখন চুক্তিভিত্তিক কর্মী হয়ে যাওয়ায় চুরির সমস্যা বেড়েছে। ট্রাভেলিং টিকিট এগজ়ামিনারদের বক্তব্য, ‘একজন টিকিট পরীক্ষকের পক্ষে চারটি করে কোচ দেখা সম্ভব নয়। চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও কোনও দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।’
ভাড়া কিছুটা বাড়লেও সমস্ত গণপরিবহণের মধ্যে সবথেকে কম খরচে ট্রেনেই যাতায়াত করা যায়। যাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া সামান্য বাড়ানো হলেও খুব একটা গায়ে লাগবে না। তবে স্টেশনে ও ট্রেনে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য আরও বাড়ানো দরকার। বিশেষত, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো আর সময় মেনে ট্রেন চালানোর দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন।