এই সময়, বর্ধমান: কখনও নিজেরপরিচয় দিয়েছেন ইডির অফিসার বলে। কখনও আবার বলেছেন, তিনি সিবিআই আধিকারিক। এ ভাবেই লোকজনকে ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন তিনি।
সম্প্রতি ইডির আধিকারিক সেজে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না থানার খেমতা গ্রামের বাসিন্দা শেখ জিন্নার আলির বিরুদ্ধে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত টানা প্রায় ১২ ঘণ্টা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালালেন ইডির পাঁচ জন আধিকারিক। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির পাঁচটি বাড়িতে এ দিন একসঙ্গে তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকরা।
একটি গাড়ি-সহ বেশ কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে জিন্নার আলিকে কোনও বাড়িতেই পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, রাতে জিন্নার আলিকে তাঁর কলকাতার নিউ টাউনের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে ইডির পক্ষ থেকে কোনও তথ্য জানানো হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই জিন্নার আলি এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন খেমতা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা। কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পরামর্শদাতা, কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিভিন্ন দপ্তরের উপদেষ্টা বলেও নিজেকে জাহির করতেন।
এমনকী অশোক স্তম্ভ দেওয়া ভিজিটিং কার্ডও ব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে 'ন্যাশনাল অ্যান্টি ট্র্যাফিকিং কমিটি'র চেয়ারম্যান বলেও দাবি করতেন। জানা গিয়েছে, আদপে এটি একটি এনজিও। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে রাজ্যের বেশ কিছু তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল বলেও প্রতিবেশীদের অভিযোগ।
খেমতা গ্রামে জিন্নার আলির প্রাসাদোপম বাড়ি এ দিন সকাল থেকেই ঘিরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা-সহ রাজ্যের আরও একাধিক জায়গায় জিন্নার আলির আরও চারটি বাড়িতেও এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে একযোগে হানা দেয় ইডি। তবে ওই ব্যক্তির পরিবারের কেউ ইডির তল্লাশির বিষয়ে মুখ খোলেননি।
এই তল্লাশির কথা জানাজানি হতেই তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে জিন্নার আলির ঘনিষ্ঠ নানা মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে শুরু করেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য।
জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই জিন্নার আলিদের মতো লোকরাই তৃণমূলের সম্পদ। এদের মদতেই তৃণমূল বাংলায় টিকে আছে। কখনও ইডি, কখনও সিবিআই, কখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসার, এ সব বলে লোকদের কাছ থেকে টাকা তোলাই ছিল জিন্নারের কাজ। সেই টাকার ভাগ তৃণমূলের লোকরা পেত।’
সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘তাঁদের দলের নেতা, মন্ত্রীদের সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলে। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গেও অনেকেরই প্রচুর ছবি রয়েছে।
এর মানেই সে তৃণমূল হয়ে গেল নাকি! জিন্নার আলি তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও কর্মী নয়। এখন গোটা বাংলায় সবাই তৃণমূলের সমর্থক। সেখানে কে কী করবে, তার দায় তৃণমূল কেন নেবে? কেউ অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি পাওয়া উচিত।’