শিশুদের হৃৎপিণ্ড খেতেন এই নবাবনন্দিনী, জীবন্ত কবর দিয়েছিলেন তাঁর বাবা, আজও তাঁর কবরের পাশ দিয়ে শিশুদের নিয়ে যেতে ভয় পান মায়েরা...
আজকাল | ০৩ জুলাই ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নবাব নগরী মুর্শিদাবাদের কোনায় কোনায় রয়েছে ইতিহাস। এই ইতিহাসের কিছুটা বেইমানিতে ঠাসা, আবার কিছুটা বিতর্কিত। আজও যেমন মুর্শিদাবাদের অন্যতম নবাব মীরজাফরকে ইতিহাসের পাতায় 'বিশ্বাসঘাতক' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তেমনি নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র নামে যে জেলার নামকরণ করা হয়েছে তাঁর একমাত্র কন্যা আজিমুন্নেসার মৃত্যু এবং তাঁর কবরকে ঘিরে নানা ধরনের 'গল্প' লালবাগ শহরে গেলেই শুনতে পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ আজিমুন্নেসার কবর এবং সংলগ্ন মসজিদটির সংরক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ নগরীর বহু বাসিন্দা বিশ্বাস করেন মুর্শিদকুলি খাঁ-র একমাত্র কন্যা আজিমুন্নেসা কোনও এক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেই কারণে রাজবৈদ্য তাঁকে মানব শিশুর কলিজা দিয়ে তৈরি একটি ওষুধ রোজ খাওয়াতেন। তাঁরা দাবি করেন কবিরাজের চিকিৎসায় নবাবনন্দিনী সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে আজিমুন্নেসার মানব শিশুর কলিজা খাওয়ার নেশা হয়ে যায় এবং তিনি নাকি চুরি করেও শিশুদের কলিজা বের করে খেতেন।
এক সময় প্রজাবৎসল নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এই ঘটনাটি জানতে পেরে শাস্তি হিসেবে নিজের কন্যাকে নাকি জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও 'কাল্পনিক' এই তত্ত্ব বর্তমানে অনেকেই মানতে রাজি নন। ঐতিহাসিকদের একাংশ দাবি করেন-১৭৩৪ সালে স্বাভাবিকভাবেই আজিমুন্নেসার মৃত্যুর পর মুর্শিদকুলি খাঁ-র বংশ পরম্পরা অনুযায়ী ধার্মিক রীতি মেনে মসজিদের সিঁড়ির তলায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। যদিও পর্যটকদের মধ্যে 'শিহরণ' তৈরি করার জন্য আজও অনেক গাইড থেকে শুরু করে টাঙা চালক, টোটো চালক তাদেরকে আজিমুন্নেসার অন্ধকার জীবনের ইতিহাস শোনান। কেউ কেউ বলেন, আজিমুন্নেসার কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মায়েরা ভয়ে তাঁদের শিশুদের হাত শক্ত করে ধরে থাকেন।
লালবাগ শহরে মুঘল স্থাপত্য রীতি অনুসারে গড়া আজিমুন্নেসার , 'আজিম কাটরা মসজিদ' এবং কবরে প্রধান ফটক দিয়ে সোজা ঢুকলে একটি পথ উপরের দিকে চলে গিয়েছে। সেখান দিয়ে না গিয়ে বাঁ দিকে গেলেই সিঁড়ির তলায় দেখতে পাওয়া যায় আজিমুন্নেসার সমাধি। তবে আজিমুন্নেসার নামাঙ্কিত মসজিদের একটি বড় অংশ বহু বছর আগে প্রাকৃতিক কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এর কারুকার্য করা দেওয়ালের কিছু অংশ কেবল বর্তমান।
বিরজু পন্ডিত নামে ঐ পুরাতাত্ত্বিক স্থলের একজন গার্ড বলেন,'অনেকেই বিশ্বাস করেন শিশু হত্যার পাপ মোচনের জন্য আজিমুন্নেসাকে মসজিদে ওঠার সিঁড়ির নিচে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্যি নয়। মুর্শিদকুলি খাঁ অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আজিমুন্নেসার নামাঙ্কিত মসজিদে যারা নামাজ পড়তে আসবেন তাঁদের পদধূলি সিঁড়ির নিচে কন্যার সমাধিতে পড়লে সে জীবিত অবস্থায় কোনও পাপ করে থাকলে তা সর্বশক্তিমান মাফ করে দেবেন।'
১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ মুর্শিদকুলি খাঁ-র কন্যার কবর এবং সংলগ্ন মসজিদটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়। এখন আর এই মসজিদে নামাজ পড়া হয় না। তবে পর্যটকদের কৌতূহলী দৃষ্টি আজও খোঁজে নবাব কন্যার অজানা ইতিহাস। আর তা খুঁজতে গিয়ে আজও হাজারো পর্যটক আজিমুন্নেসার কবরের উপর দিয়েই হেঁটে তাদের পদধূলি দিয়ে অজান্তেই তাঁর সুখের জন্নতের 'দুয়া' করছেন।