সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মহিষাসুরমর্দিনী পালায় কেউ সাজেন কার্তিক। কেউ আবার সখি, দুর্গা, রাধা। আবার কেউ অসুর। এরা সকলেই পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রায় সারাদিন এঁরা ডিউটি করেন ব্যাঙ্কের বাইরে। কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলের সামনে। আবার ব্লক সদরে ট্রাফিক সামলানোর কাজেও যুক্ত। কিংবা থানায় থেকে নানা অফিসিয়াল কাজ। বিভিন্ন শিফটে তাঁদের ডিউটি। আর সেই ডিউটির ফাঁকে ছৌ নাচেন তাঁরা। শুধু অনুষ্ঠান নয়। নিজের শিল্পকর্মকে সঠিকভাবে ধরে রাখতে অনুশীলনও করে যান। আর এভাবেই পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের শিল্পসত্ত্বাকে নষ্ট হতে দেননি। শিল্পকর্মকে ধরে রেখে ছৌ নাচকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররাও। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা একটা ভালো দিক। সিভিকের কাজ করেও নিজেদের শিল্পকর্মকে ধরে রেখেছেন। থানাতেও তারা মাঝেমধ্যে ছৌ নাচের অনুষ্ঠান করে থাকেন।”
বরাবাজার থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন এমন ২৫ জন রয়েছেন। যাঁরা এই শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে ১০ থেকে ১২ জন এখনও ছৌ নাচেন। ওই ২৫ জনের মধ্যে অধিকাংশই জঙ্গলমহল উৎসবে ছৌ নাচের লাফে অংশ নিয়ে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকের চাকরি পান। ফলে সিভিক ভলান্টিয়ারের মত কড়া নিয়মানুবর্তিতার কাজ হলেও শিল্পকর্মকে ভুলে যাননি। এই থানার সিভিক ভলান্টিয়ার বরাবাজারের রূপাবেতা গ্রামের বাসিন্দা আখতার আনসারি। তাঁর বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। ১০ বছর ধরে তিনি এই শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, “আমি কার্তিক, এমনকি কৃষ্ণও মাঝে মধ্যে সেজে থাকি। ঝাড়খন্ডে গিয়ে ছেলেবেলায় নাচ শিখেছিলাম। এখনও নাচ করি। ডিউটির ফাঁকেই আমাদের এই শিল্পকর্ম চলে।”
আরেক সিভিক আকাশ মাহাতোর বাড়ি শুকুরহুটু গ্রাম পঞ্চায়েতের মানপুরে। কার্তিক সাজার পাশাপাশি অসুরের চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন তিনি। প্রায় আট বছর ধরে ছৌ নাচ করে আসছেন। তাঁর কথায়, “সিভিকে চাকরি পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু ছৌ নাচ করতে এতটাই ভালো লাগে যে ছাড়তে পারিনি। সারারাত নাচের অনুষ্ঠান করেও পরের দিন ডিউটি করেছি। আবার এমনও হয়েছে দিনভর সিভিকের ডিউটি সামলে রাত জেগে নাচ করেছি।” থানার এই সিভিক ভলান্টিয়াররা এই লোকশিল্পকে যাতে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সেজন্য সবসময় উৎসাহ দিয়ে থাকেন বরাবাজার থানার আইসি পার্থসারথী চক্রবর্তী। পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকের কাজের সঙ্গে সঙ্গেই এই শিল্পীরা বরাবাজার থানারই একটি ছৌ নাচের টিম তৈরি করে নিয়েছেন। থানায় কোনও অনুষ্ঠান হলে ওই টিম ছৌ নাচের পালা তুলে ধরে। নিজেদের ও দলের শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি থানার ছৌ নাচের টিমকেও আরও ভালো পালা প্রদর্শনের জন্য নানা পরিকল্পনা করেন।