কসবা কাণ্ডে আরও ধারা, পুলিশেই আস্থা নির্যাতিতার পরিবার
প্রতিদিন | ০৩ জুলাই ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: কসবায় গণধর্ষণের মামলায় (Kasba Case) অপহরণ-সহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা যুক্ত করল পুলিশ। এই মামলায় ৬টি নতুন ধারা যুক্ত হওয়ায় আরও বিপাকে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ও তার সঙ্গী অন্য তিন অভিযুক্ত। বুধবার কসবায় আইন কলেজে আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষণের মামলার তদন্তভার নিল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। তদন্তের যাবতীয় নথি, বৈদ্যুতিন নথি ও কেস ডায়েরি কসবার আধিকারিকদের হাত থেকে নিজেদের হাতে নেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তার সঙ্গে এই মামলায় চার অভিযুক্তকেও গোয়েন্দারা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গিয়ে লালবাজারে জেরা করবেন। ইতিমধ্যেই এই মামলায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করেছে লালবাজার। এদিন পর্যন্ত এই তদন্তে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ১৬ জন কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী ও বাইরের কয়েকজনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে হাই কোর্টের খবর, পুলিশের উপর ভরসা রেখেছেন নির্যাতিতার মা ও বাবা। কসবায় গণধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার তাঁদের আইনজীবীদের স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা সিবিআই তদন্ত চান না। কলকাতা পুলিশের তদন্তের উপরই তাঁদের ভরসা রয়েছে। বৃহস্পতিবারই কসবা-কাণ্ডে হাই কোর্টে তিনটি জনস্বার্থ মামলা রয়েছে। হাই কোর্টের মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে চায় নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার বাবা হাই কোর্টে আইনজীবীও নিযুক্ত করেছেন। হাই কোর্ট সূত্রের খবর, নিজের আইনজীবীদের নির্যাতিতার বাবা মতামত জানিয়েছেন যে, তাঁরা কসবা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চান না। তাঁরা কলকাতা পুলিশের তদন্তেরই পক্ষে।
এই ক’দিনে কলকাতা পুলিশের তদন্তে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা দেখেই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বলে জানিয়েছে হাই কোর্টের সূত্র। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এদিন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৬টি নতুন ধারা যুক্ত করা হল। ইতিমধ্যেই গণধর্ষণ, আটকে রেখে অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের ধারা অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, জায়েব আহমেদ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রয়েছে। এদিন যে ৬টি ধারা যোগ করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যেই চারটিই জামিন অযোগ্য। এর মধ্যে অপহরণের তিনটি ধারা যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কোনও নির্যাতিতাকে না জানিয়ে তাঁর ছবি বা ভিডিও তোলা, মারধর, গুরুতর হুমকি যা ক্ষতিসাধন করতে পারে, এমন তিনটি ধারাও যোগ করা হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগ অনুযায়ী, মনোজিতের চোখের ইশারায় তার দুই সঙ্গী জায়েব ও প্রমিত জোর করে তাঁকে কলেজের গেটের কাছ থেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে গার্ড রুমের কাছে। তাঁকে জোর করে গার্ড রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘরের ভিতর তাঁকে বিবস্ত্র হতে বাধ্য করে মনোজিৎ ও অন্যরা। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। তারও আগে তাঁকে জোর করে মনোজিৎ ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁকে জোর করে টেনে ওই ওয়াশরুম ও গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়া আসলে অপহরণের ঘটনাই বলে পুলিশের দাবি। এর ফলেই ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ১৪০ (৩), ১৪০(৪), ১৪২ ধারা যোগ করা হয়। এ ছাড়াও গার্ডরুমে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করার সময় ঘটনাটির ভিডিও তোলে মনোজিতের দুই সঙ্গী। সেই কারণে ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ৭৭ ধারা যুক্ত করেছে পুলিশ। নির্যাতিতার উপর যৌন নির্যাতনের সময় তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। তাঁকে হকিস্টিক দিয়েও মারার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে যৌন নির্যাতন ও গণধর্ষণের পর তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর বন্ধুকে খুন ও মা বাবাকে গ্রেপ্তারির হুমকি দেয় মনোজিৎ ও তার সঙ্গীরা। সেই কারণে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ১১৮(১) ও ৩৫১ (৩) ধারা যোগ করা হয়েছে।