নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীকের সংবর্ধনা কর্মসূচিতে ডাক পেলেন না দিলীপ! কেন ঘোষকে দূরেই রাখছে বিজেপি?
আনন্দবাজার | ০৩ জুলাই ২০২৫
বুধবারই শমীক ভট্টাচার্যকে দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত করেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে ডাক পেলেন না দলের প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আমন্ত্রিত নন দলের আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়ও।
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। ফোন করা হয়েছিল দিলীপকে। তিনি বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না, কারণ, আমাকে আলাদা করে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। আমি সভাপতি নির্বাচনের ভোটার নই। যাঁরা প্রদেশ পরিষদ সদস্য, তাঁরাই ভোটার। আজকের অনুষ্ঠানেও তাঁদের ডাকা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কয়েক জন ডাক পেয়েছেন। আমার ওখানে যাওয়ার কথা নয়।’’
তথাগতও বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেলেও আমি যেতে পারতাম না, কারণ, আমার জ্বর হয়েছে। গত কাল রাতে শমীক ফোন করেছিল। আমাকে বলেছিল, ‘আপনার পরামর্শ তো প্রয়োজন হবেই’। আজ একটা অনুষ্ঠান আছে বলছিল। সেটা শুনেই আমি ওকে বলেছি যে, আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, আমার জ্বর।’’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়া থেকেই দূরে ছিলেন দিলীপ। বুধবার সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া এবং স্ক্রুটিনির কাজ হয়েছে সল্টলেকের বিজেপির দফতরে। সেখানে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। শুধু একটিই বৈধ মনোনয়ন জমা এবং গৃহীত হয়েছিল, যা শমীকের। তার ভিত্তিতে শমীক নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে শংসাপত্র তুলে দেওয়ার কথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় বিজেপির নিযুক্ত নির্বাচনী আধিকারিক রবিশঙ্কর প্রসাদের। সেই কর্মসূচিতে প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে সুকান্ত থাকলেও কেন দিলীপ ডাক পেলেন না, তা নিয়ে দলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও, দলের একটি সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক কালে দিলীপকে দলীয় কোনও কর্মসূচিতে যে ডাকা হচ্ছে না, তার কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছা মেনেই আপাতত এই ধরনের দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরে রাখা হচ্ছে দিলীপকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিঘায় জগন্নাথধাম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যাওয়ায় বিজেপির নেতৃত্বের কার্যত রোষেই পড়েছেন দিলীপ। তিনিও দলের একাংশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। প্রকাশ্যে ‘আদি-নব্য’ দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়েছেন। পর পর এই ধরনের কিছু ঘটনায় দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বও বেড়েছে। তা আরও স্পষ্ট হয়েছে দলের সাম্প্রতিক কিছু কর্মসূচিতে দিলীপ ডাক না-পাওয়ায়।
দিলীপ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার পরে রাজ্য বিজেপির প্রথম বড় বৈঠক ছিল ৬ মে। রাজ্য দফতরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির জনাবিশেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা-নেত্রীকে ডেকে পাঠিয়ে সে দিন প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। সুকান্ত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো বটেই, ডাক পেয়েছিলেন দুই সংগঠন সম্পাদক, পাঁচ সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এমনকি, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু দিলীপ ডাক পাননি। পরের দিন বিধাননগরের সেক্টর ফাইভে একটি হোটেলে বিজেপির আরও বড় বৈঠক বসে। সেখানে রাজ্য পদাধিকারীরা এবং জেলা সভাপতিরা ডাক পান। প্রত্যেক জেলা থেকে আরও তিন জন করে প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। দিলীপকে সেখানেও দেখা যায়নি। অনেকে বলছেন, দিলীপ যেহেতু রাজ্যের পদাধিকারী নন, তাই ডাকা হয়নি। কিন্তু দলের অন্য একটি অংশের যুক্তি, পদাধিকারী না হলেও দিলীপ রাজ্য কোর কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন সভাপতি। ওই বৈঠকে দিলীপের মতো নেতাকে ডাকায় কোনও বাধা ছিল না। শুধু বৈঠক নয়, বঙ্গে বিজেপির নানা জনসংযোগ কর্মসূচিও চলছে। প্রথম সারির রাজ্য নেতারাই রাজ্যের নানা প্রান্তে গিয়ে সে সব কর্মসূচিতে ভাষণ দিচ্ছেন। দলীয় সূত্রে খবর, দিলীপকে আপাতত সে সব কর্মসূচিতেও যোগ দিতে বলা হচ্ছে না।
এ সবের মধ্যেই সম্প্রতি গুঞ্জন ছড়িয়েছিল যে, দিলীপ নাকি নতুন দল গড়ছেন! এর জন্য তিনি বৈঠকও করেছেন কয়েক জনের সঙ্গে। যদিও দিলীপ নিজে এ সব অস্বীকার করেছেন।