সম্পূর্ণ টেট বাতিল না করে শুধু নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল কেন? প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরির মামলায় প্রশ্ন হাই কোর্টে
আনন্দবাজার | ০৩ জুলাই ২০২৫
২০১৪ সালের টেট বাতিল না করে কেন শুধু ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করা হল? প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় সেই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাই কোর্টে। প্রশ্ন তুললেন চাকরিহারাদের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। তাঁর বক্তব্য, ২০১৬ সালের যে নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে, তাতে দুর্নীতির কোনও অভিযোগই নেই। মামলাকারীরাও তেমন অভিযোগ করেননি। কেবল ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। বরং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ২০১৪ সালের টেটে, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এই নিয়োগপ্রক্রিয়া। তবে কেন সম্পূর্ণ টেট বাতিল করে দেওয়া হল না? নিয়োগপ্রক্রিয়াটি বাতিল করা হল কেন? যদিও টেটে দুর্নীতির অভিযোগগুলিরও ভিত্তি নেই বলে ওই আইনজীবীর দাবি।
প্রাথমিকে ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি বিজেপি সাংসদ। তাঁর সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা চলছে। বৃহস্পতিবারও সেই সংক্রান্ত শুনানি ছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের বেঞ্চে।
২০২৩ সালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের ফলে প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বিচারপতি তখন একটি পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, ন্যায়বিচার আসলে আইনেরও ঊর্ধ্বে (সেন্স অফ জাস্টিস ইজ় অ্যাবাভ সেন্স অফ ল)। সিঙ্গল বেঞ্চের সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চাকরিহারাদের আইনজীবী। তাঁর সওয়াল, ‘‘আইন ছাড়া কী ভাবে ন্যায়বিচার দেওয়া সম্ভব? আমাদের দেশে আইনের শাসন মৌলিক কাঠামোরই একটি অংশ। আইন না মেনে কি রায় দেওয়া যায়?’’ চাকরি বাতিল করে আবার ধাপে ধাপে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চ। এটা করা যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী।
চাকরিহারাদের আইনজীবীর সওয়ালের মুখে বিচারপতি চক্রবর্তী জানতে চান, ‘‘এগুলো এখন কেন বলছেন? তখন কেন চ্যালেঞ্জ করেননি?’’ আইনজীবী জানান, ৪২ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষকের মধ্যে রায়ে প্রথমে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের কথা বলা হয়েছিল। পরে মামলাকারীরা জানান, ৩৬ নয়, সংখ্যাটি ৩২ হাজার হবে। সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতিও সেটাই করে দেন। জানিয়ে দেন, সংখ্যা ‘টাইপ’ করতে ভুল হয়েছে। অভিযোগ, মামলাকারীদের দেওয়া তথ্যই লিখে দিয়েছেন বিচারপতি। যাচাই করে দেখেননি। হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত শুনানি এখনও শেষ হয়নি। আগামী সোমবার আবার এই মামলা শুনবে ডিভিশন বেঞ্চ।