‘আমাদের মামলাকে মিথ্যা ঘোষণা করার ধৃষ্টতা আর দেখাবে না ফেডারেশন’, কেন এই ঘোষণা পরিচালক গিল্ড-এর?
আনন্দবাজার | ০৩ জুলাই ২০২৫
পরিচালক বিদুলা ভট্টাচাৰ্যকে সমর্থন জানিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৩ জন পরিচালক উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতেই রব তুলেছিল ফেডারেশন। সংগঠনের বক্তব্য ছিল, তারা পরিচালকদের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করে না। ১৩ জন পরিচালক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। খবর, নানা বৈঠকে এ কথা ঘোষণাও করা হয়েছিল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। উচ্চ আদালতে পাল্টা আবেদন করেছিল ওই সংগঠন। ২ জুলাই ফেডারেশনের সেই আবেদন খারিজ করে দিল বিচারক তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারক ঋতব্রত কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, ফেডারেশনের সঙ্গে একই অভিযোগ জানিয়ে রাজ্য সরকার এবং টলিউডের বাকি গিল্ড একজোটে এই আবেদন জানিয়েছিল। তাদের আবেদনও খারিজ করে দেয় আদালত।
একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ, আগামী দিনে হাই কোর্টে পরিচালক গিল্ড বনাম ফেডারেশনের সমস্ত মামলার শুনানি বিচারক অমৃতা সিংহের এজলাসেই হবে।
উচ্চ আদালতের এই রায় কি ভরসা বাড়াল ১৩ জন পরিচালকের? জানতে আনন্দ বাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল ১৩ জন পরিচালকের অন্যতম এবং পরিচালক গিল্ড-এর সভাপতি সুব্রত সেনের সঙ্গে। তিনি বলেন,“আদালত যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সেটাকেই মানছি। আপাতত এর বেশি কিছুই বলার নেই।”
আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেই এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেন অভিযোগকারী পরিচালকেরা। সেখানে তাঁরা লিখেছেন, “আশা করি, উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে সম্মান জানিয়ে এ বার থেকে তাদের সমস্ত বার্তায় আমাদের মামলাকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করার ধৃষ্টতা আর দেখাবে না ফেডারেশন।” ৮ জুলাই অমৃতা সিংহের এজলাসে পরিচালকদের করা আদালত অবমাননা মামলার শুনানি হওয়ার কথা। সমস্ত পরিচালক সেই শুনানির দিকে তাকিয়ে, এমনটাও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন তাঁরা।
দিন কয়েক আগেই ছোট পর্দার প্রযোজকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। সে দিন বৈঠক শেষে আভাসে জানিয়েছিলেন, যাঁরা আইনের মাধ্যমে সমাধান খুঁজছেন তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছে ফেডারেশন। এই রায়ের পরে তাঁর কী মত? জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। যথারীতি ফেডারেশন সভাপতি সাড়া দেননি।
ফেডারেশনের কিছু তুঘলকি নিয়মের বিরুদ্ধে মাস তিনেক আগে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন এই ১৩ জন পরিচালক। প্রথমে সংখ্যাটা ছিল ১৫। পরে দু’জন পরিচালক সেই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। রাজ্য সরকার এবং ফেডারেশন সমাধান খুঁজতে বৈঠক না করায় বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁদের, সে সময়ে এ কথা জানিয়েছিলেন অভিযোগকারী পরিচালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ফেডারেশন স্বাধীন ভাবে পরিচালকদের কাজ করতে দিচ্ছে না। উপরন্তু একাধিক পরিচালকদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অভিযোগের শুনানিতে বিচারক অমৃতা সিংহের নির্দেশ ছিল, পরিচালকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তাঁদের কাজ করতে দিতে হবে। ৩ এপ্রিলের শুনানিতে এও নির্দেশ দেওয়া হয়, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারেও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। কোনও পরিচালক সমস্যায় পড়লে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে বিষয়টি দেখতে হবে। সমস্যা সমাধানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে হবে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তার প্রাথমিক উদ্যোগটুকুও নেওয়া হয়নি বলে ওই ১৩ জন পরিচালকের অভিযোগ। আদালতের নির্দেশ না মেনে ফের পরিচালকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা হয়। সরকার, বাকি গিল্ড এবং ফেডারেশনের আইনজীবীরা একজোট হয়ে দাবি করেন, টলিউডের সমস্যা সমাধান সরকারের কাজ নয়। সুতরাং, এই নির্দেশ অবৈধ। তাঁদের আনা সেই আবেদন বাতিল হল বুধবার।