রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ইউনিয়ন রুম বন্ধ করতে হবে! উচ্চশিক্ষা দফতরকে নোটিস দিতে নির্দেশ হাই কোর্টের
আনন্দবাজার | ০৩ জুলাই ২০২৫
রাজ্যের সব কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম তালাবন্ধ থাকবে! এই মর্মে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে নোটিস জারি করতে হবে। বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলায় এই নির্দেশই দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, জরুরি কোনও প্রয়োজন হলে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করতে হবে। নয়তো ইউনিয়ন রুম তালাবন্ধই থাকবে। হাই কোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের কাছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চায়। দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে। এর আগেও হাই কোর্ট এই বিষয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চেয়েছিল। ১৭ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি।
দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। এই নিয়ে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জনস্বার্থ মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতেই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এই মর্মে উচ্চশিক্ষা দফতরকে নোটিস জারি করতে বলে। অনেকে মনে করছেন, ছাত্র সংসদের ভোট না করে ইউনিয়ন রুম খোলা যাবে না, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। যদিও এই কথা বিচারপতিদের মুখে শোনা যায়নি।
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলার শুনানিতে সওয়াল করে জানান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০০ মিটারের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাবে না বলে জানাক আদালত। বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, মামলাকারী এই নিয়ে আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। মামলাটি করেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলাকারী একজন আইনজীবী। একটি হলফনামা তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। এবং অনেক কলেজে দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে কোনও কার্যকর ছাত্র সংগঠন নেই।
এই অবস্থায় রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হল, যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ ছাত্র সংগঠন বা সংসদ নেই অথবা সম্প্রতি ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, সেখানে ছাত্র সংসদের কক্ষ বা ‘স্টুডেন্ট ইউনিয়ন রুম’ তালাবদ্ধ করে রাখতে হবে। কোনও ছাত্র শুধুমাত্র রেজিস্ট্রার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া ইউনিয়ন রুমে প্রবেশ বা ব্যবহার করতে পারবে না।
কোনও ছাত্র যদি ইউনিয়ন রুমে প্রবেশের অনুমতির জন্য আবেদন করেন। তবে তার কারণ লিখিত ভাবে জানাতে হবে। এই নির্দেশ শুধুমাত্র ‘ছাত্র সংসদ কক্ষ’-এর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে। এই নির্দেশ ছাত্রদের বিনোদন বা কমন রুমের জন্য নয়।
সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ ও সুরেন্দ্রনাথ ল’ কলেজকে এই মামলায় যুক্ত করার অনুমতি দেওয়া হল। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের ছাত্র সংসদের কক্ষ শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থার অধীনে থাকবে এবং তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। যত ক্ষণ না নতুন নির্দেশ দেওয়া হয়। কলেজের গভর্নিং বডি বা পরিচালন সমিতিকে নিশ্চিত করতে হবে পড়ুয়াদের পড়াশোনা ব্যাহত না হয় এবং কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম দ্রুত শুরু হয়। আগামী ১৭ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এর আগে গত মার্চ মাসে রাজ্যের কাছে এই বিষয়ে হলফনামা চেয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। এ জন্য দু’সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা কী ভাবনাচিন্তা করছে, তা জানাতে হবে রাজ্য সরকার এবং উচ্চশিক্ষা দফতরকে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্কুল, কলেজে দীর্ঘ দিন ধরে ভোট না-হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিরোধী শিবিরের ছাত্র সংগঠনগুলি। তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিও করে। সেই নিয়ে আগেও জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানিয়েছিলেন, নিয়মে বলা রয়েছে, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাতে হবে। কিন্তু বহু বছর ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যের আইনজীবী জানান, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের মন্তব্য, “কিছু অবস্থান নিন। নির্বাচন করা হচ্ছে না। পড়ুয়াদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।”
সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এক আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গণধর্ষণের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন কলেজের প্রাক্তনী। দু’জন বর্তমান ছাত্র। তিন জনেরই তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। প্রসঙ্গত, নির্যাতিতাকে ঘটনার দিনে ওই কলেজের ইউনিয়ন রুমে যৌন হেনস্থা করারও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পরেই বিরোধী শিবিরের ছাত্রদলগুলি শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের দিকে আঙুল তুলেছে। দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না-হওয়াকেও দায়ী করেছে। এই আবহে হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল।