অসুস্থ মহিলাকে পাঁজাকোলা করে বন্ধ রেলগেট পার করে বাঁচালেন দুই সিভিক
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, কুমারগ্রাম: ট্রেন আসবে। তার জন্য রেলগেট বন্ধ। রেলগেটের দু’পাশে আটকে রয়েছে অনেক গাড়ি। সেই সময় প্রবল শ্বাসকষ্টে অসুস্থ এক মহিলাকে লাইন পার করে টোটোয় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কুমারগ্রাম ব্লকের কামাখ্যাগুড়ির ঘোড়ামারা রেলগেটে। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই মহিলা প্রাণে বেঁচে যান।
কুমারগ্রাম ব্লকের খোয়ারডাঙার বাসিন্দা ওই মহিলা। সকালে তাঁর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাড়ির লোকজন টোটোতে করে তাঁকে খোয়ারডাঙা থেকে কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে আনছিলেন। কিন্তু কামাখ্যাগুড়ির ঘোড়ামারায় এসে তাঁরা দেখেন, রেলগেট বন্ধ রয়েছে। এদিকে, ওই মহিলা অচৈতন্য অবস্থায়। দু’পাশে আটকে রয়েছে বহু গাড়ি।
এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন মহিলার পরিজনরা। যা দেখে এগিয়ে আসেন কামাখ্যাগুড়ি ফাঁড়ির দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁরা রেলগেটে আটকে থাকা গাড়িগুলি সরিয়ে দিয়ে টোটোকে রেলগেটের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও টোটোচালক মিলে ওই মহিলাকে কার্যত চ্যাংদোলা করে রেলগেট পার করে ওপারে নিয়ে যান। সেখান থেকে অন্য আর একটি টোটো করে মহিলাকে সোজা কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি হলে মহিলাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। দুই সিভিক ও টোটোচালকের তৎপরতায় রেলগেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ওই মহিলা প্রাণে বাঁচলেন বলে মনে করা হচ্ছে। কুমারগ্রামের বিএমওএইচ সৌম্য গায়েন বলেন, ওই মহিলাকে দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলে চিকিত্সার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। কেননা, কামাখ্যাগুড়ির ঘোড়মারা রেলগেটে আরওবি তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। সাধারণ মানুষকে নিত্যদিন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি খোয়ারডাঙায় পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁকেও কাঁধে তুলে ঘোড়ামারা রেলগেট পার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ফের এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা চাইছেন, অবিলম্বে ঘোড়ামারা রেলগেটে আরওবি তৈরি করা হোক।
কামাখ্যাগুড়ি ফাঁড়ির এক সিভিক ভলান্টিয়ার দেবাশিস মাহাত বলেন, আমার বাইক পেট্রোলিং ডিউটি ছিল। ঘোড়ামারা রেলগেটে দেখি ওই মহিলা টোটোয় অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর পরিবারের লোকেরা কান্নাকাটি করছেন। এদিকে রেলগেট বন্ধ। আমি আর এক সিভিক মৃন্ময় রায়কে ডাকি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সব গাড়ি সরিয়ে রেলগেট পর্যন্ত টোটোটি নিয়ে যাই। এরপর মহিলাকে পার করে অন্য টোটোয় হাসপাতালে আনা হয়।
রেলগেট বন্ধ থাকার সময় অসুস্থ ওই মহিলাকে পার করে আনার ভিডিও (সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান) তুলে এক যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেটি ভাইরাল হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নূর আলম বলেন, দুই সিভিক ও টোটোচালকে কুর্ণিশ। তাঁরা না থাকলে হয়তো আজ বড় বিপদ হয়ে যেত। আরওবি না হলে ভোগান্তি কমবে না।