লাভপুরে অনলাইনে টাকা পাঠানোর নামে হাজার হাজার টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার যুবক
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: আরে অরুণ দা, আমি নামোডাঙাল থেকে বাপ্পা বলছি। চিনতে পারলে? আজ পিকনিক আছে বুঝলে। অনেকগুলো মাল কেনার ছিল, তুমি নেই দেখছি। বউদি কি পারবে দিতে? তাহলে একটু বলে দাও তো দিতে। পাশের গ্রামে পরিচিত ছেলের নাম শুনে নিশ্চিত হয়েই লাউডস্পিকারে গিন্নিকে বলেন, দিয়ে দাও বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। সেই সুযোগে হাজার চারেক টাকার জিনিস নিয়ে ‘বউদি আসি’ বলে চম্পট। আবার কাউকে অনলাইনে টাকা দেওয়ার নাম করে ‘সার্ভার স্লো আছে, ঠিক টাকা ঢুকে যাবে। আমি এখানকার সিভিকের দাদা, কোনও চিন্তা নেই’ বলে বেপাত্তা। এভাবেই বেশ কিছুদিন ধরে লাভপুরের কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা করছিল মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি। বিশেষত, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে বলত, আমি ওঁর আত্মীয়। নেট স্লো, টাকা ঠিক ঢুকে যাবে। তার কথার ভাঁজে গ্রামের সরল ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তাঁদের প্রতারিত হওয়ার কথা চাউর হতেই অভিযোগ দায়ের হয় লাভপুর থানায়। আর তার পরপরই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। তাতেই স্বস্তিতে এলাকার ব্যবসায়ীরা।
কথাবার্তায় অত্যন্ত স্মার্ট। সহজে বিশ্বাস করানোর ক্ষমতাই ছিল হাতিয়ার। এভাবেই কয়েক মাস ধরে লাভপুরের কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের ব্যবসায়ীদের ঠকাচ্ছিল মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার চোতপুর গ্রামের বুদ্ধদেব সরকার। পুলিস জানিয়েছে, কখনও এলাকার প্রভাবশালীর আত্মীয়, কখনও আবার ‘সিভিক পুলিসের দাদা’ পরিচয় দিয়ে সে দোকানদারদের আস্থা গড়ে তুলত।
ভিড় দোকানকে টার্গেট করে নির্দ্বিধায় হাজার হাজার টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাছাই করত। সিগারেট, জামাকাপড়, মনিহারি সামগ্রী থেকে শুরু করে সারের দোকানে বিষ, কোনও ব্যবসায়ীকেই ছাড়েনি বুদ্ধদেব। তারপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে অনলাইন পেমেন্টের ভুয়ো লেনদেনের নাটক শুরু হতো। মোবাইলের স্ক্রিনে কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুয়ো ট্রানজাকশন নম্বরও দেখাতেন। ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করত, ‘দেখুন, হয়ে গিয়েছে, সার্ভার একটু স্লো, একটু পরেই মেসেজ চলে আসবে।’ আবার কোনওদিন বলত, ‘পকেটে কিছু কম আছে, বাকিটা বিকেলে দিয়ে যাব।’ এভাবে দিনের পর দিন প্রায় ২০-২৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বহু টাকার পণ্য নিয়ে চম্পট দিত বুদ্ধদেব।
কুরুন্নাহার সুশান্ত চৌধুরী সহ একাধিক ব্যবসায়ী প্রথমে এই কৌশল বুঝতে না পেরে দিনের পর দিন অনলাইনে টাকা ঢোকার অপেক্ষা করেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। পরে খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারেন, সবাই একই ফাঁদে পড়েছেন। সুশান্তবাবুর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে লাভপুর থানার পুলিস তদন্তে নেমে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে। মঙ্গলবার তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে সে তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। বুধবার বোলপুর আদালত তাকে তিনদিনের পুলিস হেফাজতে পাঠিয়েছে। নিজস্ব চিত্র