স্নাতকে আসন ৭৪ হাজার, ভর্তির আবেদন ২৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি কলেজগুলি এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখোমুখি। মোট ৪৬টি ডিগ্রি কলেজের ৭৪ হাজার ৩৮১টি আসনে ভর্তির জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ২৪ হাজার। অর্থাৎ আবেদনকারীরা সবাই ভর্তি হলেও ফাঁকা পড়ে থাকতে পারে ৫০ হাজার আসন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কলেজের প্রিন্সিপালরা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলেজগুলিতে ফার্স্ট সেমেস্টারে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে ৯১ হাজার ৪৫২টি। কিন্তু, মোট আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪ হাজার। অর্থাৎ একজন আবেদনকারী একাধিক কলেজে ভর্তির আবেদন করেছেন। পরে তাঁরা নিজের সুবিধা মতো একটি কলেজেই ভর্তি হবেন।
গত ১৮ জুন থেকে কলেজে ভর্তির অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬ জুলাই পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকলেও রাজ্য সরকার সেটা বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করেছে। তবে ইতিমধ্যেই কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীর সিংহভাগই আবেদন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ নতুক করে আর আবেদন জমা পড়ার আশা নেই বললেই চলে। পূর্ব মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজে মোট আসন ২২৫০। এপর্যন্ত ভর্তির আবেদন এসেছে ২১০০টি। তারমধ্যে ফার্স্ট প্রেফারেন্স হিসেবে জমা পড়েছে ৬৫০ আবেদন। অর্থাৎ ফার্স্ট প্রেফারেন্স ছাড়া যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেই সব ছাত্রছাত্রী অন্য কোনও কলেজে ভর্তি হতে বেশি আগ্রহী। একইভাবে জেলা সদর তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা আড়াই হাজার। সেখানে এ পর্যন্ত ২৮০০ আবেদন জমা পড়েছে। তারমধ্যে ফার্স্ট প্রেফারেন্স আবেদনের সংখ্যা মাত্র ৬০০। গত বছর এই কলেজে সাড়ে ন’শো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। গত তিন-চার বছর ধরে এখানে অনার্সের বহু সিট ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন থেকে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাসের মতো বিষয়ে মোট আসনের ধারেকাছেও যাচ্ছে না ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা।
যোগদা সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ১৫৫৬। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন এসেছে ১১১৯টি। তবে, ফার্স্ট প্রেফারেন্স আবেদনের সংখ্যা তার অর্ধেক। কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজ পূর্ব মেদিনীপুরের নামী কলেজ হিসেবে পরিচিত। এখানে মোট আসন সংখ্যা চার হাজার। ভর্তির জন্য এ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন এসেছে মাত্র ৩২০০। মোট আবেদনের অর্ধেক ফার্স্ট প্রেফারেন্স রয়েছে। ওই কলেজের প্রিন্সিপাল অমিতকুমার দে বলেন, এক সময়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার আবেদন জমা পড়ত। এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ। শেষপর্যন্ত কী হবে জানি না। মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল স্বপনকুমার মিশ্র বলেন, একেক জন ছাত্রছাত্রী পাঁচ-ছ’টি কলেজে আবেদন করছেন। ফার্স্ট প্রেফারেন্স হিসেবে কত আবেদন জমা পড়ল সেটাই মূল বিচার্য বিষয়। সেইসব ছাত্রছাত্রীরাই সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তিতে আগ্রহী বলে ধরে নিতে হবে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে কলেজে ভর্তির সার্বিক চিত্র খুব খারাপ। এবছর সেটা আরও খারাপের দিকে এগচ্ছে। ২০১৬ সালের পর এরাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়নি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পড়াশোনা করে কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী বেকার। তাই এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর পেশামুখী সার্টিফিকেট কোর্সের দিকেই ঝুকঁছেন তরুণ প্রজন্ম। যে কারণে কলেজ, বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ভরছে না।