বাংলায় কথা বললেই ওড়িশা রাজ্যে গ্রেপ্তার, উদ্বেগে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিযায়ী শ্রমিকরা
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর:
মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলা যাবে না। ভুল করে বাংলা বলে ফেললেই গ্রেপ্তার! ওড়িশায় এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। ইতিমধ্যেই সেরাজ্যে এই জেলার ৪০জন পরিযায়ী শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলার পুলিস ও প্রশাসনের চেষ্টায় তাঁদের মধ্যে ৩০জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ভিনরাজ্যে হয়রানির শিকার হয়ে অনেক শ্রমিকই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বাংলায় কথা বললেই কেন গ্রেপ্তারি-প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, জেলার সবং, পিংলা, কেশপুর, বেলদা, চন্দ্রকোণা ও শালবনী ব্লকের পরিযায়ী শ্রমিকরা সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের বৈধ নথি থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদের বদলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু দাঁতন -২ ব্লকেরই সাতজন পরিযায়ী শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই জেলাতেও ওড়িশা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা আসেন। তাঁরা অন্য ভাষায় কথা বললেও হেনস্তা করা হয় না। কিন্তু এই জেলা তথা রাজ্যের শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজ্যের তরফে এবিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি ও পুলিস সুপার ধৃতিমান সরকার গ্রেপ্তার হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। জেলাশাসক বলেন, বিষয়টি জেনে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে পুলিস ও প্রশাসন সর্বদা থাকবে। ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধানও। তিনি বলেন, ওড়িশা সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এরকম করছে। মানুষকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়, তা ওদের বাংলার সরকারের থেকে শেখা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী মানুষের পাশে আছেন। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। দাঁতন-২ ব্লকের সাবাড় পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শেখ আরফান বলেন, আমার ভাই শেখ আজিজুল ওড়িশায় বাংলায় কথা বলে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ভাই সেখানে বহুদিন ধরে কাজ করছে। এতদিন সমস্যা হয়নি। আচমকা একদিন মাইকিং করা হয়। সমস্ত নথি দেখালেও ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় দাঁতনের বিধায়ক আমাদের সহযোগিতা করেন। এঘটনায় বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বেশ ভালো ফল করে। কিন্তু এরপর আগে থেকে ঢাক পিটিয়েও ২০২১সালে বিধানসভা ভোটে জিততে পারেনি। শাসকদলের অভিযোগ, হার মেনে নিতে না পেরে আবাস যোজনা ও ১০০দিনের টাকা বন্ধ করার মতো একাধিক পদক্ষেপ করেছিল বিজেপি। এবার নতুন কৌশলে বাংলার মানুষকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওড়িশার বহু শ্রমিক এরাজ্যে কাজ করেন। বাংলা না জানলেও তাঁদের সম্মান দেওয়া হয়। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। তৃণমূল নেতারা সবেতেই বিজেপির দোষ দেখছেন বলে মন্তব্য করেন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত। তিনি বলেন, এরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে। সেটা এই সরকারের চোখে পড়বে না। পাল্টা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, বিজেপির বিভেদের কৌশল বাংলার মানুষ মেনে নেননি। ভিনরাজ্যে বাংলার মানুষের উপর এই অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলার মানুষ বিধানসভা ভোটে এর জবাব দেবেন।