তৃণমূল নেতার মদ্যপ ভাইয়ের হাতে আক্রান্ত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চাপড়া: তৃণমূল নেতার ভাইয়ের হাতে এবার আক্রান্ত খোদ সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল। তাকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বুধবার বিকেলে চাপড়া থানার হাটখোলা পঞ্চায়েতের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। নেতার ভাইয়ের এহেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এলাকাবাসীর একাংশ। ঘটনার নিন্দা করেছে শিক্ষামহল। অভিযুক্ত নেতার ভাই ঘটনাটি স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি মদ্যপ ছিলাম। বুঝতে পারিনি।’
বৃহস্পতিবার সকালে চাপড়া গভর্নমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপাল শুভাশিস পান্ডা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। জানা গিয়েছে, বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট সাইডের সমীক্ষা করতে তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। সেই সময় ওই অজয় ঘোষ নামে এক ব্যক্তি তাঁর উপর চড়াও হন। বেধড়ক মারধর করা হয় অধ্যক্ষকে। অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর শুভাশিসবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি রাজ্যের বায়োডাইভার্সিটির বোর্ডের তরফ থেকেও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তাঁদের তরফ থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, চাপড়া ব্লকে হাটখোলা পঞ্চায়েতে অবস্থিত এই চাপড়া গভর্নমেন্ট কলেজটি অবস্থিত। গাছপালা দিয়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশেই রয়েছে এই কলেজ। এমনকী, কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে সাজানো বাগান। সেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছ। কলেজের আশেপাশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু বিরল গাছ, মেডিসিনাল প্লান্ট। এমনকী, অজানা-অচেনা পশুপাখিও চোখে পড়ে মাঝেমধ্যেই। কয়েক বছর আগে কলেজের তরফে আশেপাশের বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার ধারেই বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরকম ১০টি হটস্পট চিহ্নিত হয়েছিল। সেই সমস্ত জায়গায় কলেজের পক্ষে বোর্ডও বসানো হয়েছিল। যাতে ওই হটস্পট স্থানে কেউ ক্ষতি না করতে পারে। কলেজের এই উদ্যোগ প্রশংসাও কুড়িয়েছিল রাজ্য বায়োডাইভার্সিটি বোর্ডের।
ক’দিন আগে কলেজের প্রিন্সিপাল শুভাশিস পান্ডার কাছে খবর আসে, রাজিবপুরের কাছে একটি হটস্পট এলাকায় বসানো বোর্ড কোনওভাবে বেঁকে গিয়েছে। লেখা কেউ পড়তে পারছে না। সেইমতো বুধবার বিকেলে কলেজ ছুটির পর তিনি সেই বায়োডাইভার্সিটি সাইটে যান। সেই বোর্ডটি ঠিক করার পাশাপাশি সেখানকার গাছপালা কেমন অবস্থায় রয়েছে, তাও সমীক্ষা করে দেখছিলেন তিনি। সেইসময় অজয় ঘোষ নামে ওই ব্যক্তি বাইকে এসে আচমকাই প্রিন্সিপালের উপর চড়াও হন। প্রিন্সিপালকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, সংশ্লিষ্ট বোর্ডটি ঠিক করার অনুমতি তাকে কে দিয়েছে? জবাব না শুনেই শুভাশিসবাবুকে ব্যাপক মারধর করতে শুরু করেন। নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
শুভাশিসবাবু বলেন, ‘কলেজের চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আমরা পরিবেশ রক্ষার কাজ করি। আমি খবর পাই সেখানে একটি বোর্ড নাকি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যেতেই ওই ব্যক্তি আমাদের মারধর করতে শুরু করে। আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।’ এদিকে অভিযুক্ত অজয় তাঁর দোষ স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, ‘প্রিন্সিপাল ভালো মানুষ। সেই সময় আমি মদ্যপ অবস্থায় ছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি। প্রিন্সিপাল যে সাজা দেবেন, আমি তা মাথা পেতে নেব।’ -নিজস্ব চিত্র