খিদিরপুর বাজার অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিপূরণ পেতে ৩৮৫ আবেদন, দ্রুত পুনর্বাসন দিতে নির্দেশ মেয়রের
বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খিদিরপুর অরফ্যানগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেতে জমা পড়ল ৩৮৫টি আবেদন। চলছে স্ক্রুটিনির কাজ। কিন্তু সে কাজে একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বাজার সংলগ্ন ফাঁকা জমিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী দোকান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। জানা গিয়েছে, আপাতত ২৫০টি দোকান তৈরির জন্য তৈরি হয়েছে ডিপিআর। খুব শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে। তারপর বাকি দোকান বানানোর উদ্যোগ শুরু হবে।
এই কাজগুলি দ্রুত শেষ করতে পুরসভার আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, শহরের ৫৩টি পুর বাজারের উন্নয়ন এবং অগ্নি নির্বাপণ পরিকাঠামো তৈরি করতে পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। দমকলকে বিভিন্ন বাজারের ‘ফায়ার অডিট’ করতে বলেছেন কলকাতার মেয়র। বাজারগুলিতে দমকল এবং পুরসভার আধিকারিকরা পরিদর্শন শুরু করেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে পুরসভাকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবে দমকল। এছাড়া সাত জুলাই বিভিন্ন বহুতলে অগ্নি নির্বাপক বিধি আরও নির্দিষ্ট করতে হাই পাওয়ার কমিটির দ্বিতীয় দফার বৈঠক ডাকা হয়েছে।
খিদিরপুর পুর বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের এক লক্ষ টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে রাজ্য। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের নথিপত্র সহ আবেদন জমা করতে বলা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ৩৮৫টি আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৮০টি আবেদন খতিয়ে দেখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যে কাগজ জমা পড়েছে তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমান মালিকের নামের কোনও মিল নেই। কারণ দোকান হস্তান্তর হয়েছে। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের থেকে এই দোকানের মালিকানা পুরসভার হাতে আসার সময় দোকানদারদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে অনেকগুলির মিল নেই। আদৌ তাঁরা যোগ্য দোকানদার কি না, তা কোন মাপকাঠিতে চূড়ান্ত হবে? এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যাঁদের নথিপত্র নিয়ে সমস্যা নেই, তাঁদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ হচ্ছে। পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এর পাশাপাশি জানা গিয়েছে, পুর বাজারগুলিতে ফায়ার অডিট চলছে। বিভিন্ন বাজারে বা রাস্তার ধারে কোথায় কোথায় জলের সোর্স বানানো হয়েছিল, সেগুলি কতটা কর্মক্ষম, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেয়র বলেন, ‘কলকাতার অনেক বাজারই চিন্তার কারণ। শহরের মধ্যে একাধিক বাজার অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পুরনো বেশ কিছু বাজারের ভিতরের রাস্তা সঙ্কীর্ণ। দমকলকে বলা হয়েছে, সমস্ত বাজারের ফায়ার অডিট করতে। আগুন লাগলে কোন দিক দিয়ে ঢুকবে দমকলের গাড়ি ইত্যাদি দেখতে হবে। দমকল থেকে যে নির্দেশ আসবে, পুরসভা সেই মতো কাজ করবে। কোথায় স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে হবে, কোথায় ডিপ টিউবওয়েল, কোথায় রিজার্ভার এ সব তারা খতিয়ে দেখবে।’ পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, দমকল এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সেই প্রস্তাব মতো পুরসভার বাজারগুলিতে অগ্নি সুরক্ষার কাজ হবে। পুর বাজারগুলিতে নিয়মিত ফায়ার মকড্রিলের আয়োজন করতে বলেছেন মেয়র। এতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ‘আপ টু ডেট’ থাকবে। সোমবার এই সংক্রান্ত হাইপাওয়ার কমিটির দ্বিতীয় দফার বৈঠক রয়েছে। বিভিন্ন বহুতলে ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে অগ্নিসুরক্ষা বিধি নিয়ে রিভিউ হচ্ছে। দপ্তরগুলি তাদের প্রস্তাবিত ড্রাফট বানিয়েছে। সেসব নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর সব একত্র করে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে রাজ্যের কাছে।