• ‘মিটিয়ে নাও’, নির্যাতিতাকে ফোন প্রভাবশালীদের! গভর্নিং বডির কাদের মদতে মনোজিতের বাড়বাড়ন্ত, খুঁজছে পুলিস
    বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সেটিং’ করে নেওয়ার প্রস্তাব! তাও প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের থেকে? 

    কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তের প্রতি মোড়েই অপেক্ষা করে থাকছে নতুন চমক। প্রভাব খাটানোর চমক। আর এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল ঘটনার পর থেকেই। চরম ট্রমায় ছিলেন নির্যাতিতা। বিধ্বস্ত। বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন মোবাইল। কিন্তু ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছেন, অভিযোগ তিনি করবেন। মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে। তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। পরদিন সকালে ফোন অন করতেই ঢুকতে শুরু করেছিল একের পর এক ফোন। আর তাঁরা কেউ চুনোপুঁটি নন। পুলিস সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক মহলে তাঁদের নাম সকলেই জানে। কারা তাঁরা? পুলিস সূত্রে খবর, প্রথম ফোনটাই ছিল মনোজিৎকে অত্যন্ত স্নেহ করা এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। তারপর শহরতলি এলাকার এক নেত্রীর। দু’জনেরই বার্তা ছিল একটাই—‘মিটিয়ে নাও।’ এরপর ফোন করেন কলেজেরই এক প্রভাবশালী। তিনি প্রথমে জিজ্ঞেস করেন, ঘটনাটা ঠিক কী? তারপর বলেন, ‘ইনস্টিটিউশনের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা একটু হাল্কা করা যায় কি না দেখো। যদি একটা মধ্যস্থতায় আসা যায়।’ ওইদিন তরুণীর কাছে আরও বেশ কিছু ফোন এসেছে। প্রত্যেকেই অভিযোগ না করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘কলেজের নাম উঠে আসছে। অন্য কিছু ভাবা যায় কি না দেখো।’ নির্যাতিতা তরুণী কিন্তু অনড়ই ছিলেন। প্রত্যেককেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোনওরকম আপসে তিনি যাবেন না। কারণ তাঁর সঙ্গে ২৫ জুন সন্ধ্যার পর যা হয়েছে, তার একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মনোজিৎ সরাসরি কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। অস্বীকার করায় চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। তারপর ইউনিয়ন রুমের ওয়াশ রুমের দরজায়। সেই আঘাতের চিহ্ন তরুণীর মাথায় আছে। তখনও রাজি হননি নির্যাতিতা। তাই গার্ড রুমে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় হকি স্টিক দিয়ে মার। নির্যাতিতা পুলিসকে জানিয়েছেন, তাঁকে মনোজিৎ সাফ বলেছিল, ‘সবক’ শেখাবে। অন্য দুই অভিযুক্ত জায়িব এবং প্রমিতও পুলিসকে জেরায় একই কথা জানিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ধর্ষণের পর মনোজিৎ নির্যাতিতাকে বলে দিয়েছিল, ‘যখন ডাকব আসতে হবে। যা বলব করতে হবে। আর এসব কথা বাইরে বলে লাভ নেই। অনেকে আগে আমার বিরুদ্ধে কমপ্লেন করেছিল। কিছুই হয়নি। আমার সব সেটিং আছে। পুলিসকেও এমন লোক দিয়ে ফোন করিয়ে দেব, ওখানেই সব শেষ হয়ে যাবে। এর আগেও তো আরেস্ট হয়েছি। কেউ ধরে রাখতে পেরেছে?’

    শুধুই কি রাজনীতির প্রভাব? কলেজ কর্তৃপক্ষের সায় না থাকলে এই বাড়বাড়ন্ত কি একজন ছাত্রের হতে পারে? এটাই এখন পুলিসের তদন্তের অভিমুখ। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী অফিসাররা গভর্নিং বডির মিটিংয়ের রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করেছে। এর আগে মনোজিতের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ হয়েছিল, তার ধরন কী ছিল, এফআইআর হয়েছিল কি না, এই সবই রয়েছে লালবাজারের স্ক্যানারে। কলেজে অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও মনোজিতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ফোন যে আসত, সেই তথ্য হাতে এসেছে পুলিসের। কিন্তু কে ফোন করতেন? গভর্নিং বডির কাকে ফোন করতেন? কলেজের কোন হর্তাকর্তা মনোজিৎকে আড়াল করে রেখেছিলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন তদন্তকারীরা। 

    তরুণী অভিযোগ করার পরই এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল মনোজিৎ। তার ‘রাজনৈতিক মেন্টরে’র মতো তিনিও কিন্তু জানিয়েছিলেন, ‘প্রবলেম হবে না। বের করে নেব।’ তা হয়নি। প্রতিদিন জাল আরও শক্ত হচ্ছে পুলিসের। ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার এদিনও বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। তার স্বার্থেই এই মুহূর্তে বাড়তি কিছু প্রকাশ করা যাবে না।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)