নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: কার্তিক রুইদাস পেশায় ডোমজুড়ের একটি কারখানার সামান্য শ্রমিক। অথচ তাঁর কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে নাকি জিএসটি ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলেছে। গত জুন মাসে তাঁর বাড়িতে বকেয়া জিএসটি আদায় করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছিল দপ্তরের আধিকারিকদের। কার্তিকবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আধার ও প্যান কার্ড সহ যাবতীয় নথিকে কাজে লাগিয়ে বড়সড় সাইবার প্রতারণার ঘটনা সামনে আসে। তখনই ডোমজুড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কার্তিক রুইদাস। তদন্তে নামে হাওড়া সিটি পুলিসের সাইবার ক্রাইম ও গোয়েন্দা বিভাগ। তার ভিত্তিতে দিল্লিতে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারণা চক্রের অন্যতম পান্ডা শারভন সিংকে গ্রেপ্তার করেছে হাওড়া সিটি পুলিস। তবে চক্রের মূল পান্ডা এখনও অধরা। জিএসটি ফাঁকি দিতে এই ধরনের চক্র কার্তিকবাবুর মতো বহু মানুষের নথি ব্যবহার করেছে, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে এই কারবারের হদিশ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডোমজুড়ের বাসিন্দা কার্তিক রুইদাস ডোমজুড় থানায় সাইবার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। দেখা যায়, কার্তিকবাবুর আধার ও প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, ইলেকট্রিসিটি বিল, এমনকী সইকে কাজে লাগিয়ে তাঁরই নামে কোনও ভুয়ো কোম্পানির লেনদেন চলছিল। হাওড়া সিটি পুলিসের সাইবার ক্রাইম বিভাগ প্রাথমিক তদন্তে দিল্লির নয়ডার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পায়। দেখা যায়, কার্তিকবাবুর যাবতীয় নথিকে কাজে লাগিয়ে নয়ডার ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। এই মামলার তদন্তে ডোমজুড় থানার দুই আধিকারিক ও হাওড়া সিটি পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগের দুই আধিকারিককে নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছিল। এই টিম গত সপ্তাহে দিল্লিতে হানা দেয়। জাহাঙ্গিরনগর থেকে শারভন সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত মঙ্গলবার তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে এসে হাওড়া জেলা আদালতে পেশ করে পুলিস। ধৃতকে আটদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। হাওড়া সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেন, ‘ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য সামনে আসছে। বহু কোম্পানির হয়ে তারা লেনদেন করত। চক্রের মূল অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন অনলাইন সংস্থা লেনদেনের ক্ষেত্রে জিএসটি ফাঁকি দিতে ‘মিডলম্যান’ হিসেবে এই ধরনের চক্রকে বরাত দেয়। চক্রের মূল কাজ, বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিক, মজুরের মতো নিম্নবিত্ত মানুষের নথিপত্র জোগাড় করে সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং তার মাধ্যমে ওই সংস্থার হয়ে লেনদেন করা। এক্ষেত্রে মূল কোম্পানির হদিশ কখনই পায় না জিএসটি দপ্তর। এই কাজে মোটা অঙ্কের কমিশন পেত শারভনের মতো চক্রীরা। জুন মাসে এমনই একটি ভুয়ো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৩৬ কোটি টাকা লেনদেনের হদিশ পায় জিএসটি দপ্তর। সেখানে জিএসটি বাবদ প্রায় সাত কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। এরপরই ডোমজুড়ের খাঁটোরা পূর্বপাড়ায় কার্তিক রুইদাসের বাড়িতে হানা দেন আধিকারিকরা। জালান কমপ্লেক্সের একটি কারখানায় মাসে মাত্র দশ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কার্তিকের নামে কোটি টাকার কোম্পানি কীভাবে চলছে, তার তদন্তে নেমে শেষমেশ ঘুঘুর বাসার হদিশ পেল পুলিস।