• কসবাকাণ্ড: তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৪ জুলাই ২০২৫
  • কসবার আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত নিয়ে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করে বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ। কেস ডায়েরিও তলব করেছে আদালত। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে রিপোর্ট দেবে রাজ্য। মামলায় নির্দিষ্ট করে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেও হলফনামা দেবে রাজ্য এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘সিট আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। সিটের উপর আমাদের আস্থা আছে।’

    বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তিন ঘণ্টার মধ্যেই মহিলা পুলিশ আধিকারিক একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ আগামী ১০ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে আদালতের তরফে পরিষ্কার করে জানানো হয়, নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোনও ছবি বা ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।

    আদালতের তরফে যে সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলফনামা তলব করা হয়েছে, সেগুলি হল – একজন প্রাক্তনী কীভাবে কলেজে প্রবেশাধিকার পান? কলেজের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও কেন কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন? অনধিকার প্রবেশ ঠেকাতে কী ব্যবস্থা আছে? আগে অভিযোগ জানানো হলেও কেন কলেজ এবং পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি? সিসিটিভি বা অন্য নজরদারি ব্যবস্থায় কেন খামতি ছিল?

    প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ কলকাতার কসবার আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় কলেজের নিরাপত্তা রক্ষী সহ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন কলেজের প্রাক্তনী। দু’জন বর্তমান ছাত্র। ওই দিন কলেজের ইউনিয়ন রুমে যৌন হেনস্থা করারও অভিযোগ উঠেছে। এরপরই বিরোধী শিবিরের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রভোট না হওয়ার কারণেই এই জাতীয় অব্যবস্থা দেখা দিচ্ছে। গোটা বিষয়টি নজরে আসতেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

    বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, রাজ্যের সব কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম তালাবন্ধ থাকবে। এই মর্মে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে নোটিশ জারি করতে হবে। জরুরি কোনও প্রয়োজন হলে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করতে হবে। নয়তো ইউনিয়ন রুম তালাবন্ধই থাকবে। হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের কাছে ছাত্র ভোট নিয়ে তাঁদের অবস্থান জানতে চায়। দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে। এর আগেও হাইকোর্ট এই বিষয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চেয়েছিল। ১৭ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

    দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট হয়নি। এই বিষয়টি উল্লেখ করে আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জনস্বার্থ মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতেই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট কলেজ এবং স্কুলের ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর নেই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এ ব্যাপারে হলফনামা দিয়ে আমরা জানাব, রাজ্যের অবস্থান। কিছুটা সময় দেওয়া হোক।’

    প্রসঙ্গত, বিকাশ ভবনের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যাল‍য়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে শেষবারের মতো ছাত্র ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালে এবং ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্সি ও ২০২০ সালে যাদবপুরে ছাত্রভোট হয়েছিল। তার পরে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছাত্র নির্বাচন হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা জানিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের পুজোর পরই হতে পারে ছাত্রভোট, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। যদিও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট হয়নি।

    এদিকে কসবাকাণ্ডের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার কসবার আইন কলেজ। এই নিয়েও হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, কলেজের পঠনপাঠন কোনওভাবেই যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকটি সুনিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)