• সাইবার অপরাধ রুখতে শাহকে চিঠি মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৪ জুলাই ২০২৫
  • ডিজিটাল যুগে চিন্তা বাড়াচ্ছে ডিজিটাল গ্রেফতার থেকে নানা সাইবার অপরাধ। সমাজমাধ্যমে উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু এবং ডিজিটাল প্রতারণার বিস্তার নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দীর্ঘ দু’পাতার চিঠি লিখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিকে সমাজের ‘স্থিতিশীলতার পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে চিহ্নিত করে দ্রুত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ইদানীং সমাজমাধ্যমে একের পর এক মিথ্যে তথ্য, ভুয়ো ভিডিও, এবং প্ররোচনামূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও।

    সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, এই ধরনের বিষয়বস্তুর হাত ধরে হিংসা বাড়ছে এবং মহিলাদের উপর অপরাধের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে মত মুখ্যমন্ত্রীর। চিঠিতে তাঁর আরও দাবি, ‘এসবের পাশাপাশি দ্রুত বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধ। প্রতারণা, পরিচয়পত্র চুরি, ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্যর অপব্যবহার, বদনাম করার মতো নানা ঘটনার জেরে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বহু প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে! এই চক্রে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মহিলা, শিশু, প্রবীণ এবং দুর্বল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের মানুষজন— যাঁদের পক্ষে এই সব প্রযুক্তিগত অপরাধ রুখে দাঁড়ানো বা প্রতিকার খোঁজা কার্যত অসম্ভব।’

    দু’পৃষ্ঠার চিঠির ছত্রে ছত্রে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, তত দ্রুত বদলাতে হবে আইনি কাঠামো এবং তার প্রয়োগও। কারণ প্রযুক্তি ব্যবহারের নামে অপরাধের পরিসর যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে শুধু আইন থাকলেই চলবে না, তার প্রয়োগ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার দরকার আরও বেশি।’ সেই সঙ্গে তাঁর উপদেশ, ‘সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সাধারণ মানুষকে শেখাতে হবে কীভাবে ডিজিটাল কনটেন্ট যাচাই করতে হয়, কোন তথ্য বিশ্বাসযোগ্য এবং কোনটি গুজব বা ভুয়ো।’ সবশেষে, সামগ্রিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় কিছু সুপারিশও করেছেন তিনি।

    যেমন, ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে বিশেষ সচেতনতামূলক শিবির করা যেতে পারে। সমাজমাধ্যমে গুজব ও ভুয়ো তথ্য চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। সন্দেহজনক অনলাইন কার্যকলাপের রিপোর্টিং পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। নারী, শিশু, প্রবীণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাইবার নিরাপত্তা সহায়তা চালু করা দরকার বলে মত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। চিঠির শেষে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ সহযোগিতার পক্ষে সওয়াল করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। এটি কেবল রাজ্য নয়, সমগ্র দেশের নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতাবস্থা এবং নাগরিকদের কল্যাণের প্রশ্ন।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)