ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় নির্যাতিতার মাথায় আঘাত করে মনোজিৎ! তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
প্রতিদিন | ০৪ জুলাই ২০২৫
অর্ণব আইচ: ধর্ষণের সময় নির্যাতিতা বাধা দেওয়ায় রেগে গিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেছিল মনোজিৎ মিশ্র। পুলিশের মতে, গার্ড রুমের বিছানায় নির্যাতিতার মাথা ঠুকে দিয়েছিল সে। তারও আগে ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমেও ধর্ষণের চেষ্টার সময় বাধা পেয়ে নির্যাতিতার মাথা দেওয়ালের সঙ্গেও ঠুকে দেওয়ার চেষ্টা করে ওই অভিযুক্ত। কসবায় আইন কলেজে আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। লালবাজারের এক গোয়েন্দা আধিকারিকের মতে, যৌন নির্যাতনের সময় এভাবে মাথায় আঘাত করা বা মাথায় আঘাত করার ফল হতে পারত মারাত্মক।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে নির্যাতিতাকে জোর করে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে যখন ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, তখন তিনি মনোজিতের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেছিলেন। তাকে সরানোর চেষ্টা করেন। এভাবে বাধা পেয়ে মনোজিৎ তাঁর মাথা ঝাঁকিয়ে দিয়ে আঘাত করে। সে দেওয়ালে নির্যাতিতার মাথা ঠুকে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর পর যখন তাঁকে টেনে ‘অপহরণ’করে গার্ড রুমের ভিতর নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ফের তাঁর উপর অত্যাচার করে মনোজিৎ। ধর্ষণে বাধা দিতে থাকেন। তাকে ফের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই অভিযোগকারিণীর মাথা বিছানায় ঠুকে দেওয়া হয় ও তাঁর মাথায় মনোজিৎ আঘাত করে বলে অভিযোগ। যদিও বিছানায় কার্টন ও চাদরের ‘গদি’ থাকায় ওই আঘাত হয়তো মারাত্মক হয়নি। এমনকী, ধর্ষণে বাধা পেয়ে সে হকিস্টিক দিয়েও নির্যাতিতাকে মারার চেষ্টা করে। তা থেকে নির্যাতিতার আরও বড় ক্ষতি হতে পারত বলে অভিযোগ লালবাজারের গোয়েন্দাদের। নির্যাতিতাকে এভাবে মারধর করার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদা ধারাও যোগ করা হয়েছে। এই ব্যাপারটি নিয়েও আলাদাভাবে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে, ঘটনার পর যখন মনোজিৎ বুঝতে পারে যে, তার ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা হতে চলেছে, তখন সে তারই অত্যন্ত পরিচিত এক আইনজীবীকে ফোন করে। কীভাবে সে ও তার সঙ্গীরা মামলা থেকে অব্যহতি পেতে পারে, তা নিয়েও তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে সে। কলেজের অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে জেরায় জানিয়েছে, কলেজে তার ঘর তথা গার্ড রুমের ভিতরে ধর্ষণের পর যখন মনোজিৎ ও নির্যাতিতা বেরিয়ে যান, এরপর মাত্র একবারই তিনি ঘরের ভিতর ঢুকেছিল। ওই বিছানায় তিনি ঘুমোতে চাননি। তাই সারারাত ঘরের বাইরেই কাটিয়ে দেন। পুলিশ অভিযোগের পরই গার্ড রুমের ভিতর ঢুকে তছনছ অবস্থায় ঘরটি দেখে। নির্যাতিতা ঘরের যে বিবরণ দিয়েছিলেন, তা-ও মিলে গিয়েছে। ফলে ওই ঘরটি থেকে কোনও প্রমাণ নষ্ট হয়নি বলে পুলিশের দাবি। নিরাপত্তারক্ষী পুলিশকে জানান, মনোজিৎ তাঁকে ও অন্য নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়েছিল যে, দিনে বা সন্ধ্যার পর তার একাধিক পরিচিত ও বন্ধু ইউনিয়ন রুম ও গার্ড রুমে এসে তাদের সঙ্গে মদ্যপানের আসর বসাতে পারে। তাই গেটে থাকা রেজিস্ট্রার খাতায় যেন কারও নাম লেখা না থাকে। ওই রেজিস্ট্রার খাতা বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।