• গুপ্তিপাড়ায় পুলিশের সামনেই চলল দেদার লুট, ডিএসপি বললেন 'সবই জগন্নাথের ইচ্ছে'
    এই সময় | ০৫ জুলাই ২০২৫
  • রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশ। তাদের সামনেই মন্দিরের দরজা ভেঙে চলছে লুটপাট। গায়ে তেল মেখে জগন্নাথের প্রসাদ লুটের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে শ’খানেক লোক হবে। তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। হুগলির গুপ্তিপাড়া বড়বাজারের জগন্নাথের রথ ২৮৬ বছরের পুরোনো। এখানকার রথযাত্রার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, জগন্নাথের ভাণ্ডার লুট।

    চলতি বছরে রথযাত্রা পরিচালন কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় ৮০০টি ভোগের মালসা রাখা হয়েছিল লুটপাটের জন্য। ভাণ্ডার লুট শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অবশ্য সবক’টি মালসা ফাঁকা হয়ে যায়। উল্টোরথের আগের দিন হয় এই ভাণ্ডার লুটের অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে এ দিন গুপ্তিপাড়া এবং পাশ্ববর্তী এলাকাগুলি থেকে বহু মানুষ ভিড় জমিযেছিলেন বড়বাজার এলাকায়। ভোগের মালসা হাতে পেতে চলে লড়াই।

    সেবাইত গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এর পিছনে একটি স্থানীয় লোককাহিনি আছে। তিনি বলেছেন, ‘জগন্নাথ মাসির বাড়ি বেড়াতে এসে ভালোমন্দ খেয়ে নিজের বাড়ি যেতে ভুলে যান। তখন হরপঞ্চমীর দিন সর্ষে পোড়া দিতে আসেন মা লক্ষ্মী। দাদা যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন, তার জন্য বশীকরণ করেন মা লক্ষ্মী। কিন্তু তার পরেও বাড়ি ফিরতে চান না জগন্নাথ। এর পর তাঁর ভাই বৃন্দাবন চন্দ্র কিছু লেঠেল নিয়ে আসেন। জগন্নাথ যেখানে থাকেন লেঠেলরা সেই মন্দিরের তিনটি দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। কারণ সেখানকার ভাণ্ডারে পঞ্চব্যাঞ্জন-সহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন রাখা থাকে। মন্দিরের দরজা ভেঙে লেঠেলরা সেই সমস্ত ভাণ্ডার লুট করে নিয়ে যান। তখন মাসির বাড়িতে আর কিছু ভালো খাবার না পেয়ে, চিড়ে, মুড়কি ও ফল খেয়ে উল্টোরথের দিন নিজের বাড়িতে ফিরে যান জগন্নাথ।’

    শুক্রবার ভাণ্ডার লুটের দিন সেখানে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্রর নেতৃত্বে প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন। অভিজিৎ সিনহা বলেছেন, ‘প্রতি বছরই এই অনুষ্ঠান হয়। নিরাপত্তার কোন খামতি রাখা হয়নি। গত বছরের থেকেও এ বছরে আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি রাখা হয়েছে। মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে।’ পুলিশের সামনেই চলছে দেদার লুট। এই প্রসঙ্গে তিনি মজা করে বলেছেন, ‘সবই জগন্নাথের ব্যাপার, প্রভুর ইচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)