• তমান্নার মৃত্যুতে জোরদার নিরাপত্তা মোলান্দি গ্রামে, বসছে সিসি ক্যামেরা
    বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কালীগঞ্জের অশান্ত মোলান্দি গ্রামকে মুড়ে ফেলা হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পুলিসের তরফে বসানো হচ্ছে এই ক্যামেরা। প্রাথমিকভাবে মোট ৮ জায়গায় বসবে। পরে প্রয়োজন হলে আরও বেশ কয়েক জায়গায় বসতে পারে বলে পুলিস সূত্রে খবর। গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এই ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। যেখান থেকে গোটা গ্রামকেই নজরে রাখা যায়। জানা গিয়েছে, বোমাবাজি ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতা আনোয়ার শেখের বাড়ির কাছেও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।‌ সেই সঙ্গে মোলান্দিতে পুলিস ক্যাম্পও তৈরি হয়েছে। সেখানে দু’জন সাব-ইন্সপেক্টর, পাঁচজন কনস্টেবল ও ১০ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে রাখা হয়েছে।‌ গত ২৩ জুন, সিপিএম কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে যেখান থেকে বোমাবাজি হয়েছিল, তার থেকে কিছুটা দূরেই এই ক্যাম্প বসছে। সবমিলিয়ে, ছোট্ট তমান্নার মৃত্যু বদলে দিল বড়চাঁদঘর পঞ্চায়েতের মোলান্দি গ্রামের সামগ্রিক ছবিটাকে। কড়া নিরাপত্তা বলয় গ্রামের চারিদিকে। ‌পুলিসের এই উদ্যোগে খুশির স্থানীয় বাসিন্দারা। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা মোলান্দি গ্রামে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছি। সেখানে পুলিস ক্যাম্পও তৈরি হয়েছে। ফোর্স মোতায়েন থাকবে সর্বক্ষণ।’  

    গত বৃহস্পতিবার থেকে মোলান্দি এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে পুলিসের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির ঘটনার মূল অভিযুক্ত হকসাদ মণ্ডলের বাড়ির কাছেও বসানো হচ্ছে এই ক্যামেরা।‌ রাজনৈতিক মহলের দাবি, ওই এলাকায় তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের লড়াই রয়েছে। তাই, উভয়ের উপর নজর রাখতেই এই সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।‌ গ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করতেই পুলিসের এই উদ্যোগ। যাতে অশান্তির ঘটনা ঘটলেই দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায় এবং ব্যবস্থা নেওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকা দখল নিয়ে এই অশান্তির ঘটনা দেখে আসছি। এটা শেষ হওয়া দরকার। পুলিস ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে, সিসিটিভি ক্যামেরা বসছে। আশা করি পরিস্থিতি ভালো হবে।’ গত কয়েকদিনে সেই গ্রামের মাটির নিচ থেকে প্রায় দেড়শটি সকেট ও তাজা বোমা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। অতীতে একাধিকবার মোলান্দি এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। যা প্রশাসনের কাছে গ্রামটিকে স্পর্শকাতর করে তুলেছে। গ্রামে প্রায় দেড়শো জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা চলছে।

    তমান্না খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতা আনোয়ার শেখকে লক্ষ্য করে ২০২২ সালে সিপিএম বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। তার  জেরে গোটা গ্রাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় ১১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।‌ ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে পুলিশের গাড়িকে লক্ষ্য করে আবারও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে সিপিএমের  বিরুদ্ধে। সেবারও গ্রামের ২৩ জনের নাম উঠে আসে অভিযোগপত্রে। সর্বশেষ, ২০২৫ সালের উপনির্বাচনের গণনার দিন বিজয় উৎসব উদযাপনের সময় তৃণমূল কর্মীরা লেপাড়া এলাকায় বোমাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ। তাতেই প্রাণ হারায় ছোট্ট তমান্না। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ভবিষ্যতে তমান্নার মতো আর কাউকে যাতে রাজনীতির বলি না হতে হয় তার জন্য পুলিসের এহেন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা।
  • Link to this news (বর্তমান)