নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: জিআই তকমা পাওয়ার পর থেকেই গোবিন্দভোগ ধান উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। কৃষকদের উৎসাহ দিতে কৃষিদপ্তর আতমা প্রকল্পে মুর্শিদাবাদ জেলার ২৬ ব্লকে গোবিন্দভোগ চাষ শুরু করেছে। গোবিন্দভোগ ধান নিয়ে বড় পরিকল্পনা আগেই নিয়েছিল কৃষিদপ্তর। বাংলাজুড়ে গোবিন্দভোগ ধানের চাষ বৃদ্ধি করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ, গোবিন্দভোগ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন চাষিদের অনেকেই। নানা কারণে এই ধানের চাষ করতে চাইতেন না কৃষকরা। তবে এই সুগন্ধি ধান চাষ করে ভালো লাভ পাওয়া যায়। তার দিশা দেখাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকের চাষিরা। বিশেষ করে সাগরদিঘি, খড়গ্রাম, রঘুনাথগঞ্জ-১, কান্দি, নবগ্রাম ও বহরমপুর ব্লকে গোবিন্দভোগ চাষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন চাষিরা। ইতিমধ্যেই গোবিন্দভোগ ধানের চাষ শুরু হয়েছে। চলতি মরশুমে প্রায় দু’হাজার বিঘা জমিতে এই ধান চাষ হবে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, সুগন্ধি গোবিন্দভোগ ধান চাষ লাভজনক হয়ে উঠছে। জৈব সার ব্যবহার করায় গোবিন্দভোগ ধান চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এবার ২০০০ বিঘা জমিতে গোবিন্দভোগ চাষ হচ্ছে। বিঘা প্রতি ৩৫০-৪০০ কেজি ধান উৎপাদন হয়। চাষিদের বীজ ও জৈব সার দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি ব্লকে অন্তত ১০ একর জমিতে যাতে এই ধান চাষ করা হয়, তারজন্য কৃষিদপ্তরের তরফ থেকে চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে গোবিন্দভোগ বীজ বিলি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে একর পিছু জমিতে যতটা জৈব সার লাগে, তাও দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। বহরমপুরের নিয়াল্লিশপাড়ার চাষি বিমান মণ্ডল বলেন, আমি গত বছর গোবিন্দভোগ ধানের চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন হয়েছিল। এবছরও কৃষিদপ্তরের সাহায্য নিয়ে ধান লাগিয়েছি। জৈব সারে চাষ হয়। সেজন্য খরচও কম। তবে ফসল উঠতে একটু বেশি সময় লাগে। তুলনামূলকভাবে ধান উৎপাদন কম হয়। তাই ভালোভাবে চাষ করতে পারলে বেশি দাম মেলে। ভালো লাভ করা যায়। প্রতি হেক্টরে আড়াই থেকে তিন টন ধান হয়।
তবে বেশকিছু চাষিদের আক্ষেপ, গোবিন্দভোগ ধান ভাঙাতে সমস্যা হয়। মুর্শিদাবাদে এই ধান থেকে চাল করার কোনও মিল নেই। স্থানীয় চাষিরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ধানকুটে চাল বের করেন। তাতে চালের আকৃতি নষ্ট হয়। তাই স্থায়ীভাবে একটি গোবিন্দভোগ চালের মিলের ব্যবস্থা করা গেলে চাষিরা আরও উৎসাহিত হবেন বলে সকলের দাবি।