নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান এবং সংবাদদাতা, কালনা: এক সময় দু’জন ছিলেন হরিহর আত্মা। এখন সেই ভাইজান আর মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সম্মুখ সমরে। তাঁদের লড়াই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন মন্তেশ্বরের বাসিন্দারা। দু’জনই তোলাবাজির তিরে একে অপরকে বিদ্ধ করছেন। বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হওয়ার পর মন্ত্রী বলেন, তোলাবাজির প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই দলেরই নেতা আহমেদ হোসেন লোকজন পাঠিয়ে হামলা করেছে। তাঁর দাবি, তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শুক্রবার আহমেদ হোসেন সংবাদমাধ্যমের সামনে একটি তালিকা প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, মন্ত্রী এই লোকজনদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন। পাল্টা মন্ত্রী এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আসলে আমি তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। দুই নেতার কাদা ছোড়াছুড়ি নেতৃত্ব ভালভাবে দেখছে না। কেন এমনটা হল, তা জেলা নেতৃত্বের কাছে রাজ্য জানতে চেয়েছে। পুলিসও কড়া পদক্ষেপ করেছে। মন্ত্রীর উপর হামলার অভিযোগে ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার অভিযোগে মহিউদ্দিন বড়া, আজহারউরুদ্দিন শেখ, সাদ্দাম মণ্ডল, বংশী বয়রা, সাহেব শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকলের বাড়ি মন্তেশ্বর থানা এলাকায়। শুক্রবার ধৃতদের কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক মহিউদ্দিন ও আজাহারউদ্দিনকে পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজত ও বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিন আদালতে তোলার সময় ধৃতরা দাবি করেন, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, এই লড়াইয়ের পিছনে রয়েছে ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার প্রতিযোগিতা। ভাইজান যতদিন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন, ততদিন কোনও সমস্যা হয়নি। এখন ভাইজানও বিধানসভার টিকিটকে পাখির চোখ করেছে। তিনি সেইমতো ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। জেলার দুই শীর্ষ নেতার আর্শীবাদ তাঁর মাথার উপর রয়েছে। তাই তিনি মাটি ছাড়তে নারাজ। অন্যদিকে সিদ্দিকুল্লার অনুগামীরাও নিশ্চিত, মন্ত্রী টিকিট পাবেনই। তাঁরা একপ্রকার প্রার্থী হিসেবে সিদ্দিকুল্লা সাহেবের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি।
সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রভাব মন্তেশ্বরেও পড়েছে। প্রায় সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছেছে। গ্রামের গলির রাস্তাও ঢালাই হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। সেই কারণে বাহুবলীরা না থাকলেও মন্তেশ্বরে শাসক দল সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে। এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, বাম জমানায় আমরা সিপিএমের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিলাম। তারজন্য বহু খেসারত আমাদের দিতে হয়েছে। অনেকে ঘরছাড়াও হয়েছিলেন। মানুষ পাশে থাকায় দল সাফল্য পেয়েছে। তখন কোনও বাহুবলীর দরকার হয়নি। এখন তৃণমূলের সুসময়। তাই বাহুবলীরা ক্ষীর খাওয়ার জন্য দাপট দেখাচ্ছে। এখন যাঁরা মন্তেশ্বর দাপাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সেই সময় তৃণমূলে ছিলেন না। তবে, তাঁদের দাপটে দলের হয়ে লড়াই করা তৃণমূল কর্মীরা এখন ব্যাক বেঞ্চে চলে গিয়েছেন। বাহুবলীদের আগেই নিয়ন্ত্রণ করলে মন্তেশ্বরবাসীকে এই দিনটা দেখতে হতো না। এদিকে গোটা ঘটনার খবর গিয়েছে মুখ্যমনত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সিদ্দিকুল্লাকে ফোন করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি আক্রান্ত হয়েছেন, কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার কোনওরকমের গুন্ডামি বরদাস্ত করবে না। মন্তেশ্বরে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে হেনস্তার ঘটনায় ধৃতদের শুক্রবার কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র