• মহালয়ায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, যাবজ্জীবন স্বামীর, মুখ খুললে নাবালিকা মেয়েকে খুনের হুমকি
    বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: উঠোনে গোবর জল দেওয়া নিয়ে শাশুড়ি ও বউমার মধ্যে সামান্য কথাকাটাকাটি। তা দেখেই রেগে আগুন স্বামী। ঘরে থাকা কেরোসিন এনে স্ত্রীর গায়ে ঢেলে দেন। দেশলাই কাঠি ছেলের হাতে তুলে দেন শাশুড়ি। গৃহবধূকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারেন স্বামী। এই ঘটনায় আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল স্বামী জয়ন্ত ঘোষ। বারাবনি থানার ওলিপুরে হাড়হীম করা এই হত্যাকাণ্ডের শুক্রবার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক মহুয়া বসুরায়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাবাস। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন মারা যায় শাশুড়ি শিবানী ঘোষ। সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন, স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে পুড়িয়ে খুনের দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ সবে শুরু হয়েছে। সবাই তখন কান পেতে রয়েছেন রেডিওর কাছে। এমন সময়েই ঘোষবাড়ি থেকে গৃহবধূর আর্তনাদ শুনতে পান প্রতিবেশীরা। উঠোনে গিয়ে দেখেনে গৃহবধূ শিখা ঘোষ দাউ দাউ করে জ্বলছে। প্রতিবেশীদের চাপে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গৃহবধূকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এত বড় ঘটনার পরও শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে গৃহবধূর বাপের বাড়িতে কিছু জানায়নি। মহালয়ার পরদিন সাতকলাই দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ওই গৃহবধূর ভাই সাতকলাই দিতে এসে জানতে পারেন তাঁর দিদি আগুনে পুড়ে গিয়েছেন। আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি। এরপরই থানায় বাপেরবাড়ির পক্ষ থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুড়িয়ে মারা অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিস তদন্তে নেমে ওই গৃহবধূর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় ভয়াবহ অত্যাচারের বিষয়টি জানতে পারে। ওই গৃহবধূ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে জানিয়েছিলেন,  ভোর ৪টের সময় শোওয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সংসারের কাজ সামলাতে। তখন শাশুড়ি গোবরজল দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করতে করতে আমাকে গালাগালি করে। আমি তার প্রতিবাদ করি। শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির মাঝেই স্বামী ঘর থেকে কেরোসিন এনে আমার গায়ে ঢেলে দেয়। শাশুড়ি আমার স্বামীর হাতে দেশলাই তুলে দিয়েছিল। গৃহবধূ আরও দাবি করেন, আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করার সময় স্বামী হুমকি ও ভয় দেখিয়ে বলে, যদি এনিয়ে মুখ খুলি আমার পাঁচ বছরের মেয়েকেও পুড়িয়ে মেরে দেবে। গৃহবধূর জবানবন্দি রেকর্ড করেই পুলিস গুণধর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে গৃহবধূকে বাঁকুড়া সম্মেলনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। দশমীর দিন মা দূর্গার বিজর্সনের সময়েই তাঁর মৃত্যু হয়। এনিয়ে আসানসোল জেলা আদালতে মামলার চলছিল। মোট ১২ জন সাক্ষী দেন। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্ত শাশুড়ির মৃত্যু হয়। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন জেলেই ছিল জয়ন্ত। 
  • Link to this news (বর্তমান)