ধর্ষণের পর ফূর্তির মেজাজেই মনোজিৎ, গার্ড রুমে মদ্যপান
বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে অকথ্য নির্যাতন এবং ধর্ষণের পর ভয়ভীতি তো দূরের কথা, রীতিমতো ফূর্তির মেজাজে ছিল কসবা ল’কলেজের স্বঘোষিত ‘নিয়ন্ত্রক’ মনোজিৎ মিশ্র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কুকীর্তিস্থল অর্থাৎ ল’কলেজের গার্ড রুমে বসেই দুই সঙ্গী জায়িব ও প্রমিতকে নিয়ে আকণ্ঠ মদ্যপান করে সে। গণধর্ষণের তদন্তে নেমে যে ‘টাইম লাইন’ পেয়েছেন তদন্তকারীরা, তা থেকেই উঠে এসেছে মনোজিতের এহেন কীর্তিকলাপ। জানা গিয়েছে, মদ্যপান শেষে কলেজের গার্ডকে আরও একবার ধমকে-চমকে নৈশবিহারে বেরিয়ে পড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই নেতা ও তার সঙ্গীরা। রীতিমতো ‘জয়রাইড’ সেরে নেয়। এরপর ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি ধাবায় চলে মনোজিৎ অ্যান্ড কোম্পানির ‘ডিনার’। ধাবাতে তারা রীতিমতো পার্টি করার মেজাজে ছিল। নিশিযাপন শেষে ভোরের দিকে বাড়ি ফেরে তিন মূর্তিমান।
সূত্রের খবর, অন্যান্যবারের মতোই নিজের কুকীর্তি ধামাচাপা দিতে পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুন সকাল থেকে তৎপরতা শুরু করে মনোজিৎ। প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক লাগোয়া এলাকায় পরিচিত এক ‘প্রভাবশালী’র দ্বারস্থ হয়। নানা বিপদ-আপদ থেকে মনোজিৎকে আগলে রাখতেন ওই ব্যক্তি। তাঁকে গোটা ঘটনাটি জানিয়ে, এই বিপত্তি থেকে রক্ষা করার আর্জি জানায় মূল অভিযুক্ত। ওই প্রভাবশালী বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে খোঁজখবর নিতে গিয়ে ‘পজিটিভ’ কিছু পাননি। বরং জানতে পারেন, বিষয়টি নিয়ে শীর্ষস্তরের ‘মুড’ বেশ আক্রমণাত্মক। তখন ওই প্রভাবশালী সাফ জানিয়ে দেন, কোনওরকম সাহায্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা কাটিয়েও ‘এসকেপ রুট’ মেলেনি। নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় মনোজিৎকে। এরপর ‘মেন্টর’ বলে পরিচিত আরও কয়েকজনকে ফোন করে সে। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে হাত গুটিয়ে নেন সেই ‘মেন্টর’রা।
এই পরিস্থিতিতে ল’কলেজের গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে গতি আরও বাড়িয়েছে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিস। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ অভিযুক্ত মনোজিৎ, জায়িব, প্রমিত এবং কলেজের নিরাপত্তাকর্মী পিনাকীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান গোয়েন্দারা। তদন্তের প্রয়োজনে সেখানে অত্যাধুনিক থ্রি-ডি ম্যাপিংও করা হয়। গত ২৫ জুন রাতে কোথায়, কীভাবে প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়, মনোজিৎদের দিয়ে তার ‘পুনর্নির্মাণ’ করান গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, কলেজের ইউনিয়ন রুমের কোন অংশে ছাত্রীকে অত্যাচার, আঘাত এবং ধর্ষণ করা হয় এবং ওই পড়ুয়া কীভাবে বাধা দেন, তদন্তকারীদের তা দেখায় মূল অভিযুক্ত। এরপর নির্যাতিতাকে কীভাবে গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও ‘পুনর্নির্মাণ’ করে জায়িব ও প্রমিত। ধর্ষণ পর্বে কোথা থেকে পুরো বিষয়টি ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছিল, সেটাও দেখায় অভিযুক্তরা।
মনোজিতের স্যালারি স্লিপ এবং যে অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে সে সই করত, তাও সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। ওই কলেজে মনোজিৎ যে চুক্তিভত্তিক কর্মী ছিল, আদালতে তা প্রমাণ করবে এই দুই সামগ্রীই।