পরিবহন দপ্তরের অবসর প্রাপ্ত কর্মীর পিএফ নিয়ে হয়রানি
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ জুলাই ২০২৫
অবসরের পরেও পিএফ না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএসটিসি)-এর এক প্রাক্তন কর্মী। ওই কর্মীর অভিযোগ, তিনি অবসর নেওয়ার পর দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাননি। অথচ তাঁর এই ন্যায্য প্রাপ্য নিয়ে পিএফ ট্রাস্ট এবং সিএসটিসি একে অপরের দিকে দায় ঠেলেছে। অবশেষে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ শুরু করল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করে সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে। আর সেই নির্দেশ মেনে তৃণমূল বিধায়ক এবং রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন। তিনি সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ‘এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্ট’-এর চেয়ারম্যান।
জানা গিয়েছে, মামলাকারী সিএসটিসি-র অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মীর নাম অমরেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অবসর নেওয়ার পর পিএফ না পাওয়ায় গত বছর ৯ জুলাই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় সিএসটিসি-কে মামলাকারীর সমস্ত অবসরকালীন পাওনা সুদ-সহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ এতদিনেও কার্যকর করা হয়নি। তার ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়।
যদিও এই মামলায় সিএসটিসি-র বক্তব্য, এর আগে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মীদের অবসরকালীন পাওনা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই প্রকল্প মাঝপথে একতরফাভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। ফলে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। পাল্টা রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, সিএসটিসি-কে ওই প্রকল্পের পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই এখন রাজ্য সরকারের উপর আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
এই মামলায় সিএসটিসি-র যুক্তি, রাজ্য এবং নিজেদের তহবিলের থেকে যা টাকা জোগাড় করা গিয়েছে, তা পিএফে জমা করা হয়েছে। আর পিএফ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কর্মীর নামে যথাযথ টাকা জমা না দেওয়ায় পিএফ বাবদ টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ২০১৫ সাল থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থ এবং কোভিডের পরে ১০০ শতাংশ টাকা পিএফ ট্রাস্টে দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে আদালত রাজ্য সরকারের পরিবহণ দপ্তর, অর্থ দপ্তর এবং পিএফ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি সমাধান সূত্র বার করার নির্দেশ দিয়েছিল। গত ২০ মে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, কোনও পক্ষই মামলাকারীর পাওনা মিটিয়ে দিতে চাইছে না। একজন প্রাক্তন কর্মীকে বার বার হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক দপ্তর একে অপরের উপর দায় ঠেলছে। আর মামলাকারী জানেন না, তাঁর প্রাপ্য টাকা আদৌও পাওয়া যাবে কি না! তিনি অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থায় আদালত সিএসটিসি, রাজ্য এবং পিএফ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ‘রুল’ জারি করে। আর সেই নির্দেশ মেনে শুক্রবার আদালতে হাজিরা দেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র।