• বালিঘাটের কর্তৃত্ব নিয়ে রক্তাক্ত কাটোয়া! পুলিশের স্ক্যানারে জখম তুফানের ‘কীর্তি’
    প্রতিদিন | ০৫ জুলাই ২০২৫
  • ধীমান রায়, কাটোয়া: কাটোয়ার রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জখম আরও দু’জনের হদিশ এখনও পায়নি পুলিশ। ঘটনার পর তারা পালিয়ে যায়। অপরদিকে নিহত বরকত শেখের বাড়ি বীরভূম জেলার সিয়ান এলাকায় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রাজুয়া গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনার পর গুরুতর অভিযোগ তুলছেন কাটোয়ার বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

    রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ,” সম্ভবত আমি এবং আমাদের দলের বিশিষ্ট কোনও কর্মীর উপরেই হামলা করার লক্ষ্যে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল বালিঘাটের দখল। জানতে পেরেছি ওদের পরিকল্পনা ছিল মহরমের পরেই কাটোয়ায় ঢুকে হামলা চালানোর।” যদিও কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন,”কি উদ্দেশে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। এর পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে আরও একজন আহত হয়েও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তার সন্ধান চলছে।”

    শুক্রবার রাতে তখন ঘড়ির কাঁটা ৯টা পার হয়েছে। মেঘলা আকাশ। দফায় দফায় বৃষ্টিও হচ্ছে। রাত ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ হঠাৎ কাটোয়া ১ ব্লকের কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের রাজুয়া গ্রাম তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। স্থানীয়দের কেউ ভাবেন বজ্রপাত হয়েছে। কেউ ভাবেন কারও বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েকজন মানুষ বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান মন্টু শেখ নামে এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত বাড়ি ও তার আশপাশের একাধিক চালাঘর উড়ে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের উপর রক্তাক্তবস্থায় পড়ে রয়েছে দুই তিনজন। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুজনকে উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অপরজন তুফান চৌধুরী এখনও চিকিৎসাধীন।

    পুলিশ জানতে পেরেছে, বরকত শেখ নামে বীরভূমের দুষ্কৃতীকে এনে রাজুয়া গ্রামের তুফান চৌধুরী-সহ কয়েকজন বোমা বাঁধছিল পরিত্যক্ত বাড়িতে। তখনই বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তুফান চৌধুরী দাগি দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। আউশগ্রাম থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় তুফান ও ইব্রাহিম শেখ নামে ওই গ্রামের এক দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়েছিল। বোমা বাঁধার সময় ইব্রাহিম শেখও ছিল। তবে সে পালিয়ে যায়। তুফান চৌধুরী একটি মামলায় জেলে ছিল। দশদিন আগে জামিনে ছাড়া পায় সে। এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনার পর আতঙ্কিত স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।

    উল্লেখ্য, রাজুয়া গ্রাম সংলগ্ন অজয় নদে রয়েছে একটি বালিঘাট। ওই বালিঘাট এখন শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সন্দেহ বালিঘাটের উপর কর্তৃত্বের উদ্দেশ্যেই হামলার পরিকল্পনা থেকে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। ঘটনায় জখম তুফান চৌধুরীর মা মনোফা বিবির দাবি,” আমার ছেলে বোমা বাঁধত কোনওদিন জানতে পারিনি। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর রাতে খবর পাই বোমা ফেটে আমার ছেলে আহত হয়েছে। ও কাদের সঙ্গে মিশত কিছু জানি না।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)