গাছের গুঁড়ি ঘেরার বিপদ অতীতেও, দেখেও দেখে না হাওড়া পুরসভা
আনন্দবাজার | ০৫ জুলাই ২০২৫
দিনটা ছিল চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল। বিকেলবেলা কালবৈশাখীর ইঙ্গিত দিয়ে উত্তর-পশ্চিম কোণে জমেছিল কালো মেঘ। ডুমুরজলা খেল সিটির রিং রোডের ফুটপাতে একটি বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে স্কুটারে বসে গল্প করছিলেন এক তরুণ-তরুণী। আচমকা ধেয়ে আসে জোরালো দমকা হাওয়া। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিশাল গুঁড়ি সমেত গোটা কৃষ্ণচূড়া গাছটি ভেঙে পড়ে ওই তরুণ-তরুণীর উপরে। ততক্ষণে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি, সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকার এক মহিলা স্থানীয় বাসিন্দাদের গিয়ে ওই দুর্ঘটনার খবর দিতেই তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, স্কুটারে আছড়ে পড়া গাছটির একটি মোটা ডাল পড়ে রয়েছে তরুণীর কোমরের উপরে। পাশেই মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তরুণ।
মাস তিনেক আগের এই ঘটনায় ওই তরুণ-তরুণী বেঁচে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু, যে প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছিল তা হল, ডুমুরজলা রিং রোডের ফুটপাত তৈরির সময়ে সৌন্দর্যায়নের নাম করে কয়েকশো গাছের গুঁড়ির চার পাশ কেন পেভার ব্লক বা কংক্রিট দিয়ে গেঁথে গাছগুলিকে অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল? বাসিন্দাদের বক্তব্য, তা না হলে তো এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।
এপ্রিলের ওই ঘটনাটি শুধু নয়। অভিযোগ, ২০১৭ সালে ডুমুরজলা রিং রোডে সৌন্দর্যায়নের কাজের সময়ে সমস্ত আইন হেলায় উড়িয়েকয়েকশো গাছের গুঁড়ির চার পাশ ঘেরা হয়েছিল পেভার ব্লক বা কংক্রিটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফল তাঁরা ভুগেছিলেন আমপান, আয়লা বা ফণীর মতো ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে। প্রতিটি ঝড়েই পড়ে গিয়েছিল একাধিক বড় গাছ। যার ফলে রিং রোডে বহুলাংশে কমে গিয়েছিল সবুজের পরিমাণ।
অথচ, এত গাছ পড়ে যাওয়ার পরেও হুঁশ ফেরেনি হাওড়া জেলা প্রশাসন বা পুরসভার। যার সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গিয়েছে গত মঙ্গলবার, খাস হাওড়া পুর ভবন চত্বরে থাকা একটি ইউক্যালিপটাস গাছ ভেঙে দুই পুরকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায়। এই ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, রোগ সেই একই। ইউক্যালিপটাস গাছটির গুঁড়িও পেভার ব্লক দিয়ে ঘেরা ছিল। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, সতেজ গাছটির গোড়ায় পর্যাপ্ত জল না পৌঁছনোয় সেটির শিকড় আলগা হয়ে গিয়েছিল। তার জেরেই কোনও রকম ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই সেটি আচমকা উপড়ে পড়ে যায়।
এলাকার বাসিন্দারাও বলছেন, এখনও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডুমুরজলা রিং রোডের বহু গাছও জীর্ণ হয়ে পড়েছে। কিছু গাছ হেলে পড়েছে। সামান্য হাওয়াতেই গত কয়েক মাসে ভেঙেছে একাধিক গাছ।
তবে মঙ্গলবারের ঘটনার পরে পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার আওতাধীন সব বরো অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রধান কার্যালয়ে থাকা গাছ নিয়ে সমীক্ষা চালানো হবে। একটি বিশেষজ্ঞ দল এই সমীক্ষা করবে। ইউক্যালিপটাস গাছটির গুঁড়ি ঘিরে দেওয়ার কারণেই সেটি ভেঙে পড়ল কিনা, তা দেখা হচ্ছে।’’